নয়াদিল্লি: চাকরির দাবিতে চুল কেটে ফেলা আন্দোলনকারী রাসমণি পাত্রের প্রসঙ্গ এবার উত্থাপিত হল লোকসভায়। সৌজন্যে বঙ্গ বিজেপির সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সোমবার লোকসভায় সাপ্লিমেন্টারি ডিমান্ড ফর গ্রান্ট বিষয়ক আলোচনায় বলতে উঠে চাকরির দাবিতে চুল কেটে ফেলা আন্দোলনকারী চাকরীপ্রার্থী রাসমণি পাত্রের ছবি সংসদে তুলে ধরেন বিষ্ণুপুর সাংসদ। তিনি বলেন, ‘মোদী জমানায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রোজগার, কৃষি সকল ক্ষেত্রেই দেওয়া হচ্ছে বিশেষ প্রাধান্য, সাহায্যের জন্য তুলে দেওয়া হচ্ছে অনুদান। অথচ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে চাকুরিপ্রার্থী-দের কী ভয়াবহ অবস্থা তা নিজের চোখে দেখে যান! এক হাজার দিন ধরে রাস্তায় বসে মানুষরা আন্দোলন করছেন, প্রতিবাদে নিজের মুণ্ডন করে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অধিকার নিয়ে জানাচ্ছেন দাবি, কিন্তু রাজ্যের শাসক দল নির্বিকার। তাঁরা শুধু সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্র সরকারের সমালোচনা করে আর নিজেদের জনহিতৈষী বলে দাবি করে। এই তাদের হিতৈষী হওয়ার প্রকৃত চেহারা।’
উল্লেখ্য, শনিবার ২০১৬-এর এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না ১০০০তম দিনে পড়েছে৷ আর এই দিনকে ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখার জন্য প্রতিবাদের অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন তাঁরা। ধর্না মঞ্চেই এক মহিলা এবং এক পুরুষ চাকরিপ্রার্থী চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণায় ন্যাড়া হয়েছিলেন। ১০০০ দিন ধরে ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে শুধুমাত্র মেধাতালিকার ভিত্তিতে চাকরির আশায় রাস্তায় ধর্না দিচ্ছেন চাকরিপ্রার্থীরা। পরীক্ষা দিয়েছেন, ইন্টারভিউ দিয়েছেন-সবকিছুতেই পাস করেছেন। তবুও নিয়োগ হয়নি। শনিবার ১০০০তম দিনের জন্য একাধিক পদ্ধতিতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন তাঁরা। এদিন ধর্না মঞ্চেই একজন মহিলা ও একজন পুরুষ চাকরিপ্রার্থী নিজেদের মাথার সব চুল কেটে ফেললেন। ওই চুল ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দান করবেন বলে ঠিক করেছেন তাঁরা। মাথার সব চুল কেটে ফেলার পর মহিলা চাকরিপ্রার্থী রাসমণি পাত্র কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, ‘আর কতদিন আমাদের পথে বসে থাকতে হবে? ১০০০ দিনটা কিন্তু কম নয়। পরিবার, স্বামী-সন্তান ছেড়ে আন্দোলন করছি। রাজ্য সরকার কি দেখতে পাচ্ছে না? অযোগ্যরা এখনও চাকরি করছে। রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সকলে আমাদের সমস্যা সমাধান করুন।’ এবার সেই রাসমণি পাত্রের কথাই লোকসভায় ছবি সহযোগে তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি তোপ দাগলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।
এদিন সৌমিত্রের বক্তব্যের মাঝেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা। প্রতিবাদ জানান সৌগত রায়ও। যদিও তা দমাতে পারেনি সৌমিত্রকে৷ তিনি বলেছেন, ‘কেন্দ্র সরকার যখন য়ুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো মেনে রাজ্যের সর্বাঙ্গীন হিতে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করছে, সেই সব প্রকল্প চলতে দেওয়া হয় না পশ্চিমবঙ্গে। অতি নিম্নমানের রাজনীতি করতে গিয়ে রাজ্যবাসীকে বিভ্রান্ত, সমস্যার মুখে ফেলে দিয়েছে রাজ্যের সরকার।’ এই প্রসঙ্গে সৌমিত্র রাজ্য সরকারী কর্মীদের ডিএ আন্দোলনের কথাও এদিন সদনে তুলে ধরে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত মহার্ঘ্য ভাতা বরাদ্দ হলেও, রাজ্য সরকারের কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য অধিকারের জন্য আজও কলকাতার রাস্তায় বসে আন্দোলন করছেন। তাঁদের দুঃখ কষ্টের খবর রাখে কি রাজ্য তৃণমূল সরকার?’ সংসদের অলিন্দেই প্রশ্ন তুলেছেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ।