প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বৃহস্পতিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তার পরের দিন শুক্রবার নয়াদিল্লিতে নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অমিত শায়ের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সূত্রের দাবি, শুক্রবার শায়ের তলব পেয়েই সাত সকালে বিমান ধরে দিল্লি হাজির হন শুভেন্দু। দুপুরে নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে পূর্ব নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রায় ৪০ মিনিট ‘রূদ্ধদ্বার’ বৈঠক করেন শাহ ও শুভেন্দু। যদিও ঠিক কী নিয়ে তাদের এই জরুরি বৈঠক, সে নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে মনে করা হচ্ছে, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনির মোতায়েন নিয়ে শায়ের দরবারে আর্জি জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। চেয়েছেন, ২০১৩ সালের মতো ২০২৩ এও কেন্দ্রীয় বাহিনীর তত্ত্বাবধানে হোক সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন।
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটে বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি। যার মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানোর দাবি। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে সুষ্ঠু ভোট করানোর দাবি প্রথম থেকেই জানিয়ে এসেছেন শুভেন্দু। মনে করা হচ্ছে, শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সমীপে আরও একবার সেই দাবিই তুলে ধরেন মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারের বড় ছেলে৷
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়া মাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি তুলে টুইট করেন শুভেন্দু। তিনি অভিযোগ করেন, বাংলায় গণতন্ত্রের হত্যা হচ্ছে। রাজ্য, ব্লক, জেলাস্তরে একটিও সর্বদলীয় বৈঠক না করে কীভাবে নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। পাশাপাশি কেন রাজ্যে এক দফা নির্বাচন, তা নিয়েও সরব হন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুর দাবি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। হঠাৎ করে এভাবে ভোট ঘোষণা থেকে এটা খুব স্পষ্ট যে কমিশন তৃণমূলের আঞ্চলিক শাখা সংগঠন হিসাবে কাজ করছে। হঠাৎ করে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা, আর উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা কেন নেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু। এর ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই শুভেন্দুর তড়িঘড়ি দিল্লি আগমন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ, বৈঠকের বিষয়বস্তু ‘গোপন’ রাখা ইত্যাদি নিয়ে কেন্দ্র তথা রাজ্য রাজনৈতিক মহলে প্রবল জল্পনা শুরু হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, আসন্ন ভোটে দলীয় রণকৌশল, কেন্দ্রীয় বাহিনির মোতায়েন, সর্বোপরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকতেই অমিত শায়ের সঙ্গে তাঁর এই বৈঠক।
অন্যদিকে রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি তথা কয়লা ও গরু পাচারের মতো একাধিক দুর্নীতিকান্ডে ইডি-সিবিআই এখন বাড়তি তৎপরতা দেখাতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই অভিষেক পত্নী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারপরই ডাকা হয় স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও তিনি সেখানে যাবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ কয়েকদিন আগেই তিনি সিবিআই দপ্তরে গিয়েছিলেন। একেবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তিনি দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যে বিবিধ দুর্নীতি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ধরপাকড় ও প্রয়োজনে বজ্র আঁটুনি আরও কড়া করবার লক্ষ্যে অমিত শাকে আর্জি জানিয়ে রেখেছেন শুভেন্দু, এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। এরই পাশাপাশি এদিন শুভেন্দুর দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মনোনয়ন পেশের সময় পর্যাপ্ত নয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়া ভিডিয়োগ্রাফি করতে হবে। রাজ্য প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারে। নিজেদের বক্তব্য জানিয়ে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। হাইকোর্টের এই অবস্থান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে আরও একবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনির জন্য তদ্বির করেই শুক্রবার রাতে কলকাতা ফেরার ফ্লাইট ধরবেন রাজ্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, এমনটাই জানা গিয়েছে দলীয় সূত্রে৷