নাগরাকাটা: উত্তরবঙ্গের (North Bengal) ১৬টি বন্ধ চা বাগানের ১৬ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের (Tea Worker) এক লপ্তে ফাওলই (ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স টু দ্য ওয়ার্কার্স অফ লক আউট ইন্ডাস্ট্রিস)-এর আওতাভুক্ত করল শ্রম দপ্তর। সোমবার এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি হয়েছে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শ্রমিকরা এব্যাপারে আবেদন জমা দিতে পারবেন। লোকসভা নির্বাচনের (Loksabha election) আগে বন্ধ বাগানের শ্রমিকদের মন জয়ে ফাওলইকে হাতিয়ার করছে তৃণমূল (TMC)। পালটা বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলি ওই সরকারি অনুদানের পরিমাণ না বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ। একইসঙ্গে বন্ধ বাগান খুলে শ্রমিকদের স্থায়ী স্বস্তি দিতে রাজ্য সদার্থক ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগে সরব হয়েছে তারা।
এ যাত্রায় যে বন্ধ বাগানগুলির শ্রমিকরা ফাওলই-এর আওতাভুক্ত হল তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল দার্জিলিংয়ের রুংমুক সিডার (মোট শ্রমিক সংখ্যা ১৫৬১), মুন্ডাকোঠি (৯৪৯), চুংটং (১০৭৯), নাগরি (৯৩৪), পেশক (৪০১), কার্সিয়াংয়ের আম্বোটিয়া (৯১২), শিলিগুড়ির ত্রিহানা (২৫০০), মালবাজারের সোনালি (৩৫৮), মেটেলির সামসিং (১০২৫), নাগরাকাটার বামনডাঙ্গা-টন্ডু (১১৫৯), কালচিনির রায়মাটাং (১২৫৮), কালচিনি (১২০০), দলসিংপাড়া (৯৪৩), মাদারিহাট-বীরপাড়ার দলমোড় (৮৫০), রামঝোরা (৮৬৫) ও ঢেকলাপাড়া (২৮৮)। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি ১৬ হাজার ২৮২। এই বাগানগুলি ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বন্ধ হয়েছিল।
রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা করে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার একদিকে বন্ধ বাগান খোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। পাশাপাশি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে।’ চা শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম শীর্ষ নেতা জিয়াউল আলম বলেন, ‘২০১০ সালের পর থেকে ফাওলইয়ের পরিমাণ এক পয়সাও বাড়েনি। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের ডানকানস গ্রুপের ১৮০০ শ্রমিক সমণ্বিত একটি বড় বন্ধ চা বাগান গোয়ালগছের শ্রমিকরা দফায় দফায় ফাওলইয়ের জন্য আবেদন জানালেও তাঁদের ধর্তব্যেই আনা হয়নি। শুধু আর্থিক সহযোগিতাই নয়, প্রতিটি বন্ধ বাগান খোলাতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের শ্রম দপ্তর, শিল্প দপ্তর, ভূমি দপ্তরকে যৌথভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’ বিজেপির চা শ্রমিক সংগঠন বিটিডব্লিউইউর শীর্ষ নেতা তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলার বক্তব্য, ‘ফাওলই দেওয়া হচ্ছে বটে, তবে বাগানগুলি খুলতে রাজ্যের কোনও সদিচ্ছাই দেখা যাচ্ছে না।’
বন্ধ, লক আউট কিংবা কর্মবিরতির বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়া চা বাগানের শ্রমিকদের ফাওলই দিতে গত জানুয়ারি মাসে নিয়ম শিথিল করেছিল রাজ্য। কোনও চা বাগান বন্ধ হলে একমাস পর থেকেই শ্রমিকদের ফাওলইয়ের আওতায় আনা যেতে পারে বলে সেসময় নির্দেশিকা জারি হয়। আগে ওই সময় ছিল তিনমাস। ফলে, সম্প্রতি পরপর বন্ধ হওয়া উত্তরবঙ্গের ১৬টি চা বাগানের শ্রমিকরা এর আওতাভুক্ত হলেন। ফাওলই প্রকল্পে বন্ধ বাগানের শ্রমিকরা মাসে দেড় হাজার টাকা করে ভাতা পান। শ্রম দপ্তর সূত্রে খবর, কোনও বাগান খোলার পর থেকে ফাওলই মিলবে না।