মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: বারবার বিক্ষোভ (Protest), ঘেরাও, আন্দোলনের ফল কি শেষ পর্যন্ত ফলল? আলিপুরদুয়ার (Alipurduar) জেলা হাসপাতালে ফের আয়াদের কাজের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কি কিছুটা নরম হল কর্তৃপক্ষ? সরাসরি কিছু না বললেও, সোমবার হাসপাতাল (Alipurduar District Hospital) কর্তৃপক্ষ যে নয়া সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে, তাতে আয়াদের ফের ঢোকার পথ প্রশস্ত হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমবার ছিল হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠক। সেই বৈঠকেও আয়াদের প্রসঙ্গটি উঠেছিল। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অফিশিয়ালি আয়াদের কাজে ফেরানোর বিষয়ে সিলমোহর দেয়নি। তবে হাসপাতাল সুপার পরিতোষ মণ্ডল পরোক্ষে জানিয়ে দেন, ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রেই বাড়ির লোক রাতে থাকতে পারেন না। যদি কোনও রোগীর পরিজন চায়, তবে কাউকে ভাড়া করে সেই রোগীকে দেখভালের জন্য রাখতে পারবেন। তাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপত্তি করবে না। তবে ওয়ার্ডে একজন রোগীর জন্য এমন একজন লোকই থাকতে পারবেন।
বছরখানেক আগে আয়াদের হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়। সরকারি বৈধতা না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ করে গিয়েছেন। তবে তাঁদের একাংশের বিরুদ্ধে রোগীর পরিবারের লোকের উপর আর্থিক জুলুমবাজির অভিযোগ উঠেছিল। বর্তমান হাসপাতাল সুপার দায়িত্বভার নেওয়ার পরে পরেই তাঁদের ওয়ার্ড থেকেই বের করে দেন। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েন শ’খানেক আয়ামাসি। তারপর থেকে তাঁরা হাসপাতালে কাজে ফেরার দাবিতে ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। পরবর্তীতে কাজ হারানো ওই আয়াদের আন্দোলনের রাশ জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের হাতে চলে যায়।
কাজ হারানো আয়ারা ইতিমধ্যে একাধিকবার সুপারের অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। পথ অবরোধও করেছেন। এদিনের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকের পর কোনও সুরাহা না হলে আরও তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছিলেন। তবে বতর্মান পরিস্থিতিতে তাঁরা ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। আয়াদের পক্ষে মায়া ঘোষ বলেন, ‘মঙ্গলবার আমরা নিজেদের মধ্যে একটা বৈঠক করব। তবে হাসপাতাল সুপারকে ধন্যবাদ। আমরা চাই যাঁদের প্রয়োজন, সেই রোগীদের সামান্য টাকার বিনিময়ে পরিষেবা দিতে। হাসপাতালের নিয়মের বাইরে, কেউ কোনও অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করবে।’
জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি শান্তনু দেবনাথ বলেন, ‘প্রথম দিন থেকে আমরা দাবি করে আসছি, যে কোনও শর্তে আয়াদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হোক। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে রোগীদের আয়ার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কাজ করতে যেতে বাধা দেবে না, এটাই আশা করছি।’
এই আয়াদের নিয়ে কিন্তু একটা সময়ে ভূরিভূরি অভিযোগ ছিল। প্রসূতি বিভাগে শিশুর মুখ দেখতে তাঁদের মোটা টাকা দিতে হত। রোগীর বেড দখল করে অনেক সময় তাঁদের ঘুমিয়ে থাকার অভিযোগ উঠেছে। একেকজন আয়া পাঁচ-ছয়জন রোগী দেখার নাম করে টাকা নিয়ে তারপর কাউকেই সুষ্ঠু পরিষেবা দিতেন না বলেও অভিযোগ ছিল।
হাসপাতাল সুপার এদিন বলেন, ‘এক বছর হল আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে আয়া ছাড়াই রোগীদের ভালো পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। তাই যাদের বাড়ির লোক নেই, সেরকম পরিস্থিতিতে কেউ কাউকে রাখলে, সেটাতে বাধা দেওয়া হবে না।’ তবে এও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, আগের মতো পরিস্থিতি যাতে ফের তৈরি না হয়, সেদিকে নজর রাখা হবে। রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান সুমন কাঞ্জিলাল অবশ্য এদিন আয়াদের প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, ‘সরকারি পরিকাঠামোর মধ্য দিয়ে আমরা হাসপাতালে পরিষেবার মান উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছি।’