শিলিগুড়ি: সদ্য খোঁড়া পুকুরে দিনভর জলকেলিতে ব্যস্ত লক্ষ্মী-ঊর্মিলা। খানিক দূরে জলাশয়ে শুয়ে ‘বরফ ম্যাসাজ’ নিচ্ছে জেনিফার আর ফুরবু। একটু পরপর ফোয়ারার জলে উড়ে এসে গা ভেজাচ্ছে পাখিরা। উত্তরে পারদ বাড়তেই এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কে।
তাপপ্রবাহে পুড়ছে দক্ষিণবঙ্গ। বৃষ্টির দেখা না মেলায় উত্তরেও দিনের তাপমাত্রা বাড়ছে উত্তরোত্তর। এমন অবস্থায় চিড়িয়াখানায় থাকা প্রাণীদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাতে ডায়েট বদলের পাশাপাশি বুনো আবাসিকদের জলের অভাব মেটাতে একাধিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেইমতো শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারি পার্কের জন্যও বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। বিশেষ করে পার্কে যেন সবসময় বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকে সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। তাই জেনারেটর এবং ইনভার্টারের ব্যবস্থা করার নির্দেশিকা এসেছে। প্রাণীদের জন্য কী কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং হয়েছে তার ছবি সহ বিস্তারিত রিপোর্টও পাঠাতে হচ্ছে জু অথরিটির কাছে। চিড়িয়াখানাগুলি সেগুলি পালন করছে কি না তা দেখতে কর্তৃপক্ষের সদস্য সচিব সৌরভ চৌধুরী নিজে পরিদর্শন শুরু করছেন। তিনি বলছেন, ‘প্রাণীদের স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। ডায়েট চার্টে বিশেষ বদল আনা হয়েছে।’
রাজ্যের অন্য চিড়িয়াখানার মতো বেঙ্গল সাফারি পার্কেও বেশ কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাফারি পার্কে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ যেমন রয়েছে তেমনই হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের মতো প্রাণীও রয়েছে। এই ব্ল্যাক বিয়ারগুলি অপেক্ষাকৃত শীতল জায়গায় থেকে অভ্যস্ত। তাই হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ারের শেলটারে সবসময় বরফ দেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ সময়ই ওই আইসবার নিয়ে থাকছে ভালুকগুলি। মাঝে মাঝেই গিয়ে জলে শুয়ে থাকছে। পার্কের ভেতরে সমস্ত প্রাণীর শেলটারে ছোট ছোট পুকুরের সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। পুকুরগুলিতে জল প্রতিদিন বদলানো হচ্ছে।
মাসখানেক আগেই পাঁচ সন্তান প্রসব করেছে সাফারি পার্কের ‘রয়েল’ সদস্য শীলা। ভরা সংসার নিয়ে শীলাও এখন গরমে কাহিল। তাই সুযোগ পেলে এনক্লোজারের ভেতরেই জলে গা ভিজিয়ে নিচ্ছে ওরাও। একটু পর পর তাদের আতিথেয়তায় আসছে পানীয় জল, এমনকি ওআরএস। ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচাতে সাফারি পার্কের সদস্যদের খাবারের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সও।
সূত্রের খবর, প্রতিটি এনক্লোজারে পর্যাপ্ত ছায়ার জন্য কোথাও ত্রিপল দিয়ে ছাউনি তৈরি করা হচ্ছে তো কোথাও ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগাতে বলা হয়েছে। পাখিদের খাঁচাগুলিতেও যাতে কড়া রোদ না পড়ে সেইজন্য ছাউনি দেওয়া হয়েছে। খাঁচার ভেতর থাকছে ফোয়ারাও। তৈরি হয়েছে বাড়তি ঘর। প্রতি ঘণ্টায় প্রাণীদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসককে জানাচ্ছেন কর্মীরা।
এলাহি আয়োজনের শেষ এখানেই নয়। বন্যপ্রাণীদের ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল’ রাখতে আনা হয়েছে স্ট্যান্ড ফ্যান এবং এয়ারকুলার। পাশাপাশি ভেন্টিলেটর এবং এক্সজস্ট ফ্যানও লাগানো হয়েছে নাইট শেলটারে। খাবারের সময়সীমাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। মূলত খুব সকালে নয়তো বিকেলের দিকে খেতে দেওয়া হচ্ছে ‘অতিথি’দের। পাখি, ভালুকদের তরমুজ জাতীয় খাবার বেশি দেওয়া হচ্ছে।
কুলার এবং ফ্যান চালানোর জন্য ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের প্রয়োজন। তাই বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে যাতে কোনওভাবেই ফ্যান বা কুলার বন্ধ না হয় তার জন্যে জেনারেটর কিংবা ইনভার্টারের ব্যবস্থা করার নির্দেশিকা এসেছে। রাজ্যের সমস্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষই একই পদ্ধতিতে প্রাণীদের খেয়াল রাখছে।