রায়গঞ্জঃ দাবি মতো চাঁদার টাকা না পেয়ে মহকুমা শাসকের দেহরক্ষীকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ক্লাব কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার কর্ণজোড়া ফাঁড়ির অন্তর্গত মোটর কালিবাড়ি এলাকায়। গুরুতর জখম দেহরক্ষী ওই পুলিশ কনস্টেবলকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয়েছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে।
জানা গিয়েছে, জখম পুলিশ কনস্টেবলের নাম নন্দ মণ্ডল(৪০), বাড়ি মালদাতে। কর্মসূত্রে তিনি বর্তমানে থাকেন রায়গঞ্জের রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায়। গতকাল রাত সাড়ে ১১ টা নাগাদ স্ত্রী দেবী মণ্ডল তাদের আট বছরের একটি সন্তানকে নিয়ে বাড়িতেই ছিলেন পুলিশকর্মী নন্দ মণ্ডল। সেই সময় স্থানীয় এক ক্লাবের সদস্যরা বাড়িতে এসে চাঁদাবাবদ কুড়ি হাজার টাকা চায় বলে অভিযোগ। এই বিপুল পরিমান টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ক্লাবের সদস্যরা ১৫০০০ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেয় নন্দ মণ্ডল। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে কর্ণজোড়া ফাঁড়ির অন্য এক পুলিশকর্মী রতন বিশ্বাসের সামনেই ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে বলে অভিযোগ। সেখানেই রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন পুলিশের কনস্টেবল। এরপরই বেগতিক দেখে চাঁদা আদায়কারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর জখম অবস্থায় পুলিশকর্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজে।
এদিকে দেহরক্ষীর ওপর হামলার খবর যায় রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতির কাছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জেলা পুলিশ সুপারকে ফোন করে বিষয়টি জানান। জেলা পুলিশসুপারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রায়গঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। সেখান থেকে চার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে রায়গঞ্জ থানায় নিয়ে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম ধনঞ্জয় বর্মন (২৭), অজয় বর্মন (৩০), গৌতম বর্মন (২৯), সুব্রত বর্মন (৩৮) বাড়ি রায়গঞ্জ থানার কর্ণজোড়া ফাঁড়ির অন্তর্গত কমলা বাড়ি (১) গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মোটর কালীবাড়ি এলাকায়। এই ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
রবিবার ধৃতদের রায়গঞ্জ মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। রায়গঞ্জ জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী পিন্টু ঘোষ বলেন, “ধৃতদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা সহ একাধিক জামিন আযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বিচারক এদিন জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
রায়গঞ্জের মহকুমা শাসক কিংশুক মাইতি বলেন, “বিষয়টি পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই যুক্ত রয়েছে। তাদের যাতে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় সেই ব্যাপারে পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। জখম পুলিশ কনস্টেবলের স্ত্রী দেবী মণ্ডল বলেন, “আমাদের বাড়ি মালদাতে। বছর দুয়েক হলো কর্ণজোড়ায় বাড়ি করেছি। গতকাল রাতে প্রথমে কুড়ি হাজার হাজার ও পরে ১৫ হাজার টাকা চাঁদা চায় স্থানীয় ক্লাবের কর্মকর্তারা। সেই টাকা না দেওয়ায় আমার স্বামীকে পুলিশের সামনেই খুন করার চেষ্টা করে। এদিন দুপুরে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি চাই অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। ওদের ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছি না আট বছরের বাচ্চাকে অন্যের বাড়িতে রেখে হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছি।”