Thursday, May 16, 2024
Homeরাজ্যউত্তরবঙ্গবেঙ্গল সাফারি ও গুম্ফার ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছে তরিবাড়ির জীবন

বেঙ্গল সাফারি ও গুম্ফার ছোঁয়ায় বদলে গিয়েছে তরিবাড়ির জীবন

শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি : ইওয়াম ইন্ডিয়া বুদ্ধিস্ট মনাসটেরি। সোনালি রংয়ের চূড়া, খয়েরি দেওয়ালের এই গুম্ফার উচ্চতা যেন পাল্লা দিতে চায় দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলোর সঙ্গে। এই গুম্ফায় শিলিগুড়ি ও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের নিয়মিত আনাগোনায় বদলে গিয়েছে তরিবাড়ি গ্রামের কৃষ্ণ প্রসাদের জীবন।

গুম্ফার উলটোদিকেই বাড়ি কৃষ্ণের। হালকা গোলাপি রঙের দোতলা বাড়ির গায়ে বড় করে লেখা, ‘হোমস্টে ও রেস্তোরাঁ’। উৎসাহে কৃষ্ণ বলে চললেন, ‘জানেন তো, আগে চাষবাস করতাম। বেঙ্গল সাফারি তৈরি হওয়ার পর থেকে অল্প অল্প লোকজন আমাদের গ্রামে আসতে শুরু করেছিল। তারপর এই গুম্ফা হওয়ার পর পর্যটকদের যাওয়া-আসা শুরুর পর তো গোটা ছবিটাই বদলে গেল। এখন প্রতিদিন দু’হাজার টাকার মতো রোজগার হয়েই যায়।’

বেঙ্গল সাফারির পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে ডাবগ্রাম-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তরিবাড়ির রাস্তা। একসময় হাতির উপদ্রবের জন্য কুখ্যাত ছিল এই গ্রাম। গ্রামের একপাশ বরাবর গিয়েছে বেঙ্গল সাফারির সীমানা। আর একপ্রান্তে গুম্ফা। এই বেঙ্গল সাফারি আর গুম্ফাই যেন স্নেহের পরশে ঘিরে রয়েছে তরিবাড়িকে। শুধু কৃষ্ণ প্রসাদই নয়, বদলে গিয়েছে নিমা লেপচা, বিকাশ লেপচা থেকে শুরু করে গঙ্গা থাপাদের জীবন। বছর ছয়েক আগে এই গ্রামে চারশো বাসিন্দা ছিলেন, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে হাজার। এলাকায় উপার্জনের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখে পাহাড় থেকেও অনেকে এসে গ্রামে জমি কিনছেন। তৈরি করছেন বিলাসবহুল বাড়িও। জমির দামও বেড়েছে চড়চড় করে। পাঁচ বছর আগে জমির দাম কাঠা প্রতি ২ লক্ষ টাকা থাকলেও এখন সেটা গিয়ে ঠেকেছে ৮ লক্ষে।

নিজের বাড়ির রাস্তার দিকের ঘরের জানলা খুলে চিপস, কোল্ড ড্রিংকস বিক্রি করছিলেন সুরেশ সোনার। বছর ষাটের সুরেশের জন্ম এই গ্রামেই। আশপাশে গজিয়ে ওঠা বিলাসবহুল বাড়িগুলো দেখিয়ে বলছিলেন, ‘একসময় এই পুরো জায়গাটাই চাষের জমি ছিল। ধান আর গম হত। সব চাষ হত না। দিনের শেষে আমাদের দু’বেলা খাবারের বেশি কিছু ছিল না।’

চাষ কমে যাওয়ায় হাতির উপদ্রবও কমেছে। সুরেশের মতো গ্রামের পুরোনো খেটে খাওয়া মানুষ তাই এখন মন দিয়েছেন হোমস্টে ও রেস্তোরাঁয়। সুরেশের ধাঁচে বাড়ির মধ্যে থেকেই অনেকে ছোট দোকান চালাচ্ছেন। হোমস্টের ক্ষেত্রেও নিজেদের বাড়িকেই ব্যবহার করছেন ইয়ুডেন লেপচারা। বাড়ির মধ্যে কয়েকটা ঘর বানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। বাড়ির সামনে জমিতে নানা গাছ লাগিয়ে সাজিয়ে তুলছেন রেস্তোরাঁ।

ইস্থার লেপচা নিজের রেস্তোরাঁর রক্ষণাবেক্ষণ করছিলেন। হঠাৎ করে এই ধরনের চিন্তাভাবনা কীভাবে এল? প্রশ্ন করতেই ইস্থারের জবাব, ‘চার বছর আগে গুম্ফা চালুর পর থেকেই গ্রামে পর্যটকের আসা-যাওয়ার সংখ্যা অনেকগুণ বেড়ে গিয়েছে। দূর থেকে আসা পর্যটকদের অনেকেই আমাদের কাছে রেস্তোরাঁ, হোমস্টের খোঁজ করতেন। সেই থেকে আমাদের মধ্যে এই ধারণা আসে।’ যার যতটুকু সামথর্য, তার মধ্যেই শুরু করেন জীবিকা বদলের লড়াই। তবে এখনও গ্রামে পানীয় জলের কোনও সুষ্ঠু ব্যবস্থা হয়নি। কুয়োর জলে ভরসা রাখতে হয় অনীশ গুরুংদের।

কুয়ো দেখিয়ে অনীশ বলছিলেন, ‘গরমের সময় তো কুয়োর জলও শুকিয়ে যায়। রেস্তোরাঁ, হোমস্টে খোলার পর জলের চাহিদা আরও বেড়েছে। কোনওভাবে বাইরে থেকে জল নিয়ে আসতে হয়।’ তবে, গত পাঁচ বছরে গ্রামের রাস্তার উন্নতি হয়েছে। আর এই উন্নতির পেছনে ঘুরেফিরে আসছে ওই গুম্ফা ও বেঙ্গল সাফারির কথাই। গঙ্গা তামাং বললেন, ‘এই দুই জায়গায় আমাদের পরিবারের মতো গ্রামের অনেক পরিবারের ছেলেরা চাকরিও পেয়েছে।’

এত কিছুর মধ্যেও তরিবাড়িতে এখন রয়েছে গ্রামের স্নিগ্ধ রূপ। এখনও মেঘের চাদর ছিঁড়ে উঁকি দেয় পাহাড়, ভেসে আসে পাহাড়ি বাতাস। সম্প্রতি গ্রামে জমি কিনেছেন মিরিকের বাসিন্দা অলোক বিশ্বকর্মা। বললেন, ‘এই পরিবেশের কারণেই তো এত সুন্দর জায়গায় জমি কিনলাম।’

সংখ্যায় অনেক কমে গেলেও এখনও গ্রামে চাষের জমি রয়েছে। পুনিত সোরেনের কথায়, ‘গ্রামে একেবারেই  চাষ বন্ধ করে দিলে সে সৌন্দর্যটা হারিয়ে যাবে। সে ধারণা থেকে এখনও চাষের জন্য কিছু জমি রেখেছি।’ আর এসবকিছুর মধ্যে পঞ্চায়েত ভোটের মরশুম এলেও তার কোনও প্রভাব নেই বদলে যাওয়া জীবনে। এলাকায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী (বুথ নম্বর ১৯/৬) যশোদা সোনার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। যশোদার সঙ্গে যোগাযোগ না করা গেলেও স্থানীয় নিপেন লেপচা বললেন, ‘বর্তমান শাসকের আমলে এলাকায় উন্নয়ন হয়েছে। রাজনীতি করে নিজেদের মধ্যে হানাহানি করে লাভ নেই।’ সবমিলিয়ে, গুম্ফা ও বেঙ্গল সাফারির ওপর নির্ভর করে বদলে গিয়েছে পুরো তরিবাড়ির অর্থনৈতিক চালচিত্র। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আলাদা করে মাথা ঘামাতে চান না স্থানীয়রা।

Sourav Roy
Sourav Royhttps://uttarbangasambad.com
Sourav Roy working as a Journalist since 2013. He already worked in many leading media houses in this few years. Sourav presently working in Uttarbanga Sambad as a Journalist & Sud Editor of Digital Desk from March 2019 in Siliguri, West Bengal.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Digha Accident | দিঘা যাওয়ার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা, বাস-গাড়ি সংঘর্ষে মৃত ৪

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: দিঘা যাওয়ার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বাস ও চারচাকার গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হল ৪ জনের। বৃহস্পতিবার সকালে সাড়ে সাতটা নাগাদ...

Fire | গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ড শিলিগুড়িতে, ভস্মীভূত একটি দোকান

0
শিলিগুড়ি: অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত (Fire) হল একটি দোকান। ঘটনার ঘটেছে শিলিগুড়ি (Siliguri) পুরনিগমের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দার পাড়া বাজারে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার গভীর...

Balurghat | আত্রেয়ীর জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কাশিয়া খাঁড়ি, সমস্যায় কৃষকরা

0
বালুরঘাট: আসছে না আত্রেয়ীর জল (Atreyee river)। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে বালুরঘাটের কাশিয়া খাঁড়ি। এদিকে খাঁড়ির জল না পেয়ে সমস্যায় এলাকার হাজার হাজার কৃষক। জলের...

রাজনীতিবিদ হওয়ার স্বপ্ন কবে দেখবে নবীন প্রজন্ম

0
  অনুপ দত্ত বীরভূমের উত্তর লাভপুরের শীতলগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র রিক বাগদী বোকা হতে চায়। কারণ বোকা হলে ও কাউকে ঠকাবে না! বোকা হওয়া! সে...

শিল্পকলার অপব্যবহার নিয়ে কিছু প্রশ্ন

0
  পার্থ চৌধুরী আমাদের ছেলেবেলায় শিলিগুড়িতে নামগানের রমরমা ছিল উল্লেখ করার মতো। কোনও কোনও ঘুম না আসা মধ্যরাতে শুনতে পেতাম, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কীর্তনের সুর।...

Most Popular