প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিতর্কে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অলিখিত জেহাদ ঘোষণা করেছে আম আদমি পার্টি। পাটনার বিরোধী বৈঠকে দিল্লি অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে মতান্তরের পরে ছত্তিসগড় ও রাজস্থানের মতো কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা ভোটে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল সর্বশক্তি নিয়োগ করবে, এমন আভাস দিয়েছে আগেই। আপের এই পরিকল্পনার আভাস পেয়ে নেহাৎ হাত গুটিয়ে বসে থাকার পাত্র নয় কংগ্রেসও। আসন্ন বিধানসভা ভোটে ছত্তিসগড় ও রাজস্থানে আম আদমি পার্টির তৈরি রণকৌশলের বিরুদ্ধে রাতারাতি পালটা পরিকল্পনা গঠনের সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস হাইকমান্ড।
কংগ্রেস সূত্রের দাবি, বুধবার নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে, কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ রাহুল গান্ধি, দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালরা বৈঠকে বসেছিলেন ছত্তিসগড় প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে৷ এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও৷ বছরের শেষে নির্ধারিত ছত্তিসগড় বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি কীভাবে করা হবে তার রূপরেখা তৈরি করাই ছিল বৈঠকের মূল এজেন্ডা। এই বৈঠকেই কংগ্রেস হাইকমান্ড স্পষ্ট করেছে তাদের মনোভাব যেখানে ছত্তিসগড়, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে ‘আপ’-র আগ্রাসন রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রদেশ শাখার উপরেই। কংগ্রেস শাসিত দুটি বড় রাজ্য রাজস্থান এবং ছত্তিসগড়ের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল এগোচ্ছে, এটা জানার পরেও তাদের দল যে চুপ করে থাকবে না, রাহুল গান্ধি এবং কেসি বেণুগোপালকে পাশে বসিয়ে বুধবারের বৈঠকেই সুস্পষ্ট ভাষায় তা জানিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে নিজেই, এমনই দাবি শতাব্দী প্রাচীন দলের।
উল্লেখ্য, দিল্লি সরকারের অধীনে কর্মরত আইএএস আধিকারিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মোদি সরকারের আনা অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে তারা যে পিছু হটবেন না ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজেই। এই ইস্যুতে পাটনার বিরোধী বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির সঙ্গে আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতান্তরের খবরও সর্বজনবিদিত৷ অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে অধিকাংশ বিরোধী দল আপ-র পাশে দাঁড়ালেও কংগ্রেস কেন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে না, পাটনার বৈঠকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন কেজরিওয়াল। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন ছিল, দিল্লি সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে আনা অর্ডিন্যান্সকে আইনি রূপ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে বিল নিয়ে এলে কংগ্রেসের অবস্থান কী হবে? দুটি প্রশ্নের উত্তরেই কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়, সময় এলেই তারা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। দেশ এবং গণতন্ত্র বিরোধী কোনও পদক্ষেপ নেবে না শতাব্দী প্রাচীন দল৷ কিন্তু এই উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি আপ।
বস্তুত, এর পরেই প্রকাশ্যে এসেছে আম আদমি পার্টির পরিকল্পনা যেখানে রাজস্থান, ছত্তিসগড় এবং মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে আপ, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বয়ং আপ সুপ্রিমো ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ এই খবর পেয়েই বুধবারের বৈঠকে কংগ্রেস হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপ-র রণকৌশলের পাল্টা রণনীতি তৈরি করবে তারাও৷ সূত্রের দাবি, ছত্তিসগড়ে আম আদমি পার্টিকে রোখার দায়িত্ব কংগ্রেস হাইকমান্ড তুলে দিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের হাতেই৷ এই প্রসঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, আপ-কংগ্রেসের এই দ্বৈরথের মাঝে বিজেপি বিরোধী সার্বিক ঐক্যের ভবিষ্যৎ কী? এই মুহূর্তে এই প্রশ্নের উত্তরের দিকেই তাকিয়ে গোটা বিরোধী শিবির।