নাগরাকাটাঃ রেশন দোকান টিকিয়ে রাখাই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বামনডাঙ্গা চা বাগানের ডিলারের। শনিবার গভীর রাতে ফের ওই দোকানে হামলা চালিয়ে সবকিছু কার্যত চুরমার করে দিয়েছে দলছুট দাঁতাল। এখানেই থেমে থাকে নি বুনোটি। লোহার পাতের শাটার ভেঙে ভেতরে ঢুকে অন্তত দশ মিনিট ধরে সাবাড় করে বস্তায় বস্তায় আটা। পরে ফেরার সময় ৫০ কিলোগ্রামের একটি বস্তা শুঁড়ে করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এই নিয়ে চলতি সপ্তাহে মোট ৩ বার হাতির বেপরোয়া হামলার শিকার হল বাগানের ফ্যাক্টরি লাইনে অবস্থিত সরকারী র্যাশন বিলি বন্টনের দোকানটি।
ক্ষতিগ্রস্ত ডিলার অমিত আগরওয়াল বলেন, যা পরিস্থিতি তাতে এদিন আর নতুন করে দোকান ঘর মেরামতির সাহস দেখাতে পারি নি। ফের হামলা হলে ওই বাবদ পুরো খরচই জলে চলে যাবে। কিভাবে র্যাশন দোকানটি চালাব তা ভেবে দুঃশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না। বন দপ্তরের বন্যপ্রাণ শাখার খুনিয়া রেঞ্জের রেঞ্জার সজল দে বলেন, হাতির গতিবিধির প্রতি বনকর্মীরা সাধ্যমত নজর রেখে চলছেন।
নাগরাকাটার প্রত্যন্ত বামনডাঙ্গা চা বাগানটিতে বছর ভরই হাতির হামলা লেগেই থাকে। সেখানকার স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মত প্রতিষ্ঠানগুলিও লাগাতার হামলার শিকার। ওই বাগানে দুটি র্যাশনের দোকান রয়েছে। অন্যটি বাগানের বিছ লাইনে। এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত। হাতির হানায় ওই দোকানটিও অক্ষত নেই। বাধ্য হয়ে সেখানকার মালপত্র এখন অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থান বাগানের ফ্যাক্টরিতে রাখেন মহিলারা। এদিকে বর্তমানে বিপন্ন হয়ে পড়া রেশন দোকানটি যে চাল-আটার মত খাদ্য সামগ্রী অন্য কোন সুরক্ষিত স্থানে রাখবে তেমন উপায় আর তাঁদের কাছে নেই। ফলে দোকানের ভেতরই বাধ্য হয়ে রাখতে হচ্ছে। আর বারবার হাতির নজর গিয়ে পড়ছে সেখানে। কয়েক মাস আগে দোকানের চারপাশে কংক্রিটের পিলার দিয়ে সীমানা পাঁচিল তৈরি করে দিয়েও লাভ হয় নি। সেসব আগেই গুঁড়িয়ে দিয়েছে হাতির পাল। ডিলার বলেন, ফের এমাসের বরাদ্দ আসবে। কোথায় মজুত করব বুঝে উঠতে পারছি না। বন দপ্তরকে একটা কিছু বিহিত করে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও লাভ হয় নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রেই জানা গেছে র্যাশন দোকানটির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫০০ শ্রমিক খাদ্য সামগ্রী পেয়ে থাকে। বর্তমানে বামনডাঙ্গা চা বাগানটি অচল। মজুরি-বেতন ও বোনাস বকেয়া থাকায় গত ৭ দিন ধরে সেখানকার শ্রমিকরা কেউ কাজে যাচ্ছেন না। পরিচালকদেরও কেউ বাগানে নেই। এমন অবস্থায় তাঁদের র্যাশন হাতির পেটে যাওয়ায় দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন শ্রমিকরাও। সেখানকার তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সঞ্জীল ওরাওঁ বলেন, একেতেই কাজ নেই। সরকারী র্যাশনই বেঁচে থাকার ভরসা। সেটাও হাতি খেয়ে ফেলছে। কিভাবে যে এখানে মানুষ বাঁচবে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।