আশিস মণ্ডল, সিউড়ি: বিজেপির (BJP) রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়। শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও এমনটাই ঘটেছে বীরভূমের সাঁইথিয়ায়। এনিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি দলের দুই সাংগঠনিক জেলা সভাপতির ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়েছে দলের অন্দরে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তৃণমূল (Tmc) নেতা অতনু চট্টোপাধ্যায়কে ‘গদ্দার’ বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ করেছেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। এমনকি গদ্দারকে যারা দলের সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন তারা দলের ক্ষতি করছেন বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি দলের একাংশ।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর কেন্দ্রের বিজেপির প্রার্থীর নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন বিজেপি জেলা সাধারণ সম্পাদক অতনু চট্টোপাধ্যায়। সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল। দলের ঘরে বাইরে চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি। সেই থেকে দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তার। ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেসের বোলপুরের কার্যালয়ে গিয়ে অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mondol) হাত থেকে দলীয় পতাকা নিয়ে বিজেপির সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন তিনি। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, এলাকার মানুষের উন্নয়নের স্বার্থে, এলাকার উন্নয়নের জন্য তাঁর এই সিদ্ধান্ত। এই লক্ষ্যেই তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তখন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক অভিসন্ধির জন্যই তৃণমূল গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য কাকের গায়ে ময়ূরের পালক লাগিয়েছিলাম, কাক কাকই থাকে।’
সেই অতনু চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম (Birbhum) জেলার সম্পাদক করা হয়। বিজেপির বিরুদ্ধে একের পর এক সভা করতে শুরু করেন তিনি। প্রত্যেক সভায় বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক ভাষণ দিতেন। সদ্য সমাপ্ত পুরসভা নির্বাচনে তিনি রামপুরহাট পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে ঘুরে বিজেপির বিরুদ্ধে সভা করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলে অতনুকে গুরুত্ব দিতেন না নেতাকর্মীরা। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেপ্তার হয়ে তিহার জেলে বন্দি হওয়ায় পর দলে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন অতনু চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে ফের বিজেপিতে ঢোকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যেহেতু তিনি বোলপুর সাংগঠনিক জেলার লোক ফলে সেই সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সন্ন্যাসী চরণ মণ্ডল ওরফে অষ্টম তাকে দলে নিতে অস্বীকার করেন। তাই বোলপুর সাংগঠনিক সভাপতিকে গুরুত্ব না দিয়ে বীরভূমের সাংগঠনিক সভাপতির হাত ধরে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। শনিবার সাঁইথিয়ায় বিজেপির একটি রাস্তা অবরোধ ও অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন অতনু চট্টোপাধ্যায়। ওই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়াই শুধু নয়, তাকে মাইক ধরে বক্তব্য রাখতেও দেখা যায়। এতেই দলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিজেপির কর্মসূচিতে মাইক ধরে থাকা অতনু চট্টোপাধ্যায়ের ছবি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে ক্ষোভ উগড়ে দিতে শুরু করেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। তাদের দাবি, অতনু চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তার পরে কি তিনি আবার বিজেপি দলে যোগ দিয়েছেন? দলে যোগ না দিয়ে তিনি কোন অধিকারে বিজেপির জেলা নেতৃত্বের পাশে বসে বিজেপির কর্মসূচিতে মাইক্রোফোন ধরলেন। কেন তাকে সামনের সারিতে জায়গা দেওয়া হল? সমাজমাধ্যমে বিজেপি কর্মীরা লিখেছেন, চোরকে কেন দলে নিলেন বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। কেউ কেউ অতনু চট্টোপাধ্যায়কে ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি তাকে যারা দলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরও ধিক্কার জানিয়েছেন। এমনকি এই ঘটনার পর বিজেপির বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী বেশি মাথাচাড়া দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্য নেতৃত্ব ও লোকসভা নির্বাচনে দলের পর্যবেক্ষককে লিখিতভাবে জানাতে চলেছে। এনিয়ে ধ্রুব সাহা বলেন, ‘উনি পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’ কিন্তু যে সাংগঠনিক জেলার অধীনে রয়েছেন অতনু বিজেপির সেই জেলা সভাপতি সন্ন্যাসী চরণ মণ্ডল ওরফে অষ্টম বলেন, ‘উনি এখনও তৃণমূলে আছেন বলে আমি জানি। আমি ওনাকে দলে নিইনি। কিভাবে ওনাকে দলে নেওয়া হয়েছে সেটাও বলতে পারব না।’