রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: টাইগার হিল (Tiger Hill) নিয়ে মামলায় চার সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা চাইল জাতীয় পরিবেশ আদালত। প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, এলাকায় পেট্রোল-ডিজেল চালিত গাড়ি চলাচল, কংক্রিটের দেওয়াল তুলে দেওয়া, মোবাইল টাওয়ার বসানো সহ একাধিক বিষয়ে মামলা করেছেন পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্ত। মামলায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক দপ্তরকে জড়িয়েছেন তিনি। সেই মামলায় বিবাদী পক্ষদের হলফনামা দিতে বলা হয়েছে।
টাইগার হিলকে বাঁচাতে সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, সুভাষ যে বিষয়গুলি তুলে ধরেছেন সেগুলি কতটা সত্য সেই সমস্ত বিষয় হলফনামায় জানতে চাওয়া হয়েছে। বুধবার জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি বি অমিত স্থালেকর এবং বিশেষজ্ঞ সদস্য ডঃ অরুণকুমার বর্মার যৌথ বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। সুভাষ বলছেন, ‘দার্জিলিংকে সুইৎজারল্যান্ড বানাতে চাইছে রাজ্য সরকার। সুইৎজারল্যান্ডেও বরফ পড়ে, এখানেও বরফ পড়ে। আর কী দরকার? পশ্চিমবঙ্গকে বাঁচাতে হলে আগে উত্তরবঙ্গকে বাঁচাতে হবে।’ বিষয়টি নিয়ে দার্জিলিংয়ের জেলা শাসকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যান দীপেন ঠাকুরিকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে তিনি সবটা শুনে বলেন, বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। পরবর্তীতে তাঁর যুক্তি, ‘টাইগার হিলের বিষয়ে এখনও কোনও নোটিশ পাইনি।’
সিঞ্চল অভয়ারণ্য তথা টাইগার হিলকে ১৯১৫ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে অবৈধভাবে বসতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, অভয়ারণ্যের কোর এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইকো সেন্সিটিভ জোন ঘোষণা করতে হবে। এই ইকো সেন্সিটিভ জোনে কোনও বসতি বা নির্মাণ কিছুই থাকতে পারে না। কিন্তু টাইগার হিলে অবৈধ নির্মাণ হচ্ছে বলে অভিযোগ। মোবাইল টাওয়ার বসানোয় বন্যপ্রাণের ওপর প্রভাব পড়ছে। এর বাইরে যথেচ্ছভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হচ্ছে এবং আবর্জনার সঙ্গে প্লাস্টিক সেখানেই পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। এই ধরনের ১৮টি অভিযোগ তুলে ধরে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছেন সুভাষ। বুধবার সেই মামলার শুনানি ছিল।
শুনানিতে তিনি দাবি করেন, এলাকায় জৈব চাষ ছাড়া কোনও কৃষিকাজ করা যাবে না, প্রতিরক্ষার কাজ ছাড়া মোবাইল টাওয়ার বসানো যাবে না এবং বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করতে হবে। দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর, বন ও পরিবেশমন্ত্রক, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, এবং দার্জিলিং পুরসভাকে নোটিশ করার নির্দেশ দেয়। চার সপ্তাহের মধ্যে সব পক্ষের হলফনামা চাওয়া হয়েছে। তারপরই পরবর্তী শুনানি হবে।