নকশালবাড়ি: আট বছরে দলীয় কার্যালয় তৈরি করতে পারেনি সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনের আগে হাতিঘিসায় সিপিএমের অস্তিত্ব সংকটে। কানু সান্যালের এই গ্রাম একসময় সিপিএমের আঁতুড় ছিল। কিন্তু গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে সেই গ্রামে সিপিএম এখন নিজের অস্তিত্ব বাঁচানোর লড়াইয়ে নেমেছে।
২০২২ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাতিঘিসাতে প্রথমবার সিপিএমকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের দাপাদাপিতে হাতিঘিসার ১৬টি সংসদে সিপিএমের কোনও পঞ্চায়েত সদস্য নেই। ফলে হাতিঘিসায় রীতিমতো অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে সিপিএম।
সামনে লোকসভা ভোট। হাতিঘিসা-নকশালবাড়িজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের একাধিক কর্মসূচি দেখা গেলেও সিপিএমের কোনও কর্মীকে এলাকায় ঢুঁ মারতে দেখা যায়নি। ৩৪ বছর রাজত্ব করেও হাতিঘিসায় সিপিএম কোনও স্থায়ী দলীয় কার্যালয় তৈরি করতে পারেনি। ২০১৫-’১৬ সালে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে রাস্তার ধারে অবস্থিত হাতিঘিসায় সিপিএমের একমাত্র দলীয় কার্যালয় ভেঙে পড়েছিল। আর নতুন করে কার্যালয় তৈরি করতে পারেনি সিপিএম। তারপরেই হাতিঘিসা হাইস্কুলের সামনে একটি অস্থায়ী টিনের শেডে চলে দলের কর্মসূচি। মাধব সরকার, ঝরেন রায়ের মতো সিপিএমের নেতারা নতুন করে দলীয় কার্যালয় তৈরিতে উদ্যোগী হননি। গত কয়েক বছরে হাতিঘিসায় এই নেতাদের আর সেভাবে আন্দোলন করতেও দেখা যায়নি।
যদিও সিপিএমের হাতিঘিসা এরিয়া কমিটির সম্পাদক মাধব সরকারের কথায়, ‘আমরা অর্থের অভাবে হাতিঘিসায় দলীয় কার্যালয় বানাতে পারিনি। তবে মাঠেঘাটে আমরা নিজেরা মিলে সভা করেছি। আমরা প্রতিদিন মিটিং করছি, প্রচারও চলছে। ইতিমধ্যে হাতিঘিসায় ১৮টি বুথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এলাকার মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরেই সিপিএম নকশালবাড়ি এবং হাতিঘিসাকে নিয়ে আলাদা এরিয়া কমিটি গঠন করেছিল। তারপরেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের কোনও প্রার্থীকে জেতাতে পারেনি। কয়েক মাস আগে হাতিঘিসায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন।
তারপরেই বিজেপির দলীয় কর্মীদের মধ্যে হাতিঘিসাজুড়ে সাড়া পড়েছে। তাঁরা এখন ব্যস্ত নরেন্দ্র মোদির সভার প্রচারে। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও পাড়ায় সমাধান, মহিলা বৈঠকের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি করা হয়েছে। ৯ মার্চ কাওয়াখালিতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে হাতিঘিসায় বিজেপি কর্মীরা যেমন প্রচারে ব্যস্ত, ঠিক তেমনই কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের জনগর্জন সভা নিয়েও কর্মীরা প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের নকশালবাড়ির ব্লক সভাপতি পৃথ্বীশ রায়ের বক্তব্য, ‘হাতিঘিসায় সিপিএমই জমির দালালদের আশ্রয় দিয়েছিল। তাই তারা এখন নিজেদের জন্য জমি খুঁজে পাচ্ছে না। হাতিঘিসাতে এই দলটি বিলুপ্ত হতে চলেছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বনাম তৃণমূলের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে। আর আমরা হাতিঘিসায় প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করছি। তাই উন্নয়ন দেখেই মানুষ আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’
হাতিঘিসায় যেখানে নকশাল আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেখানে এখন রাজনৈতিক কথোপকথনের কেন্দ্রে থাকা শক্তিশালী তৃণমূল কংগ্রেসের সামনে কীভাবে মাথা তুলছে বিজেপি। সিপিএমকে নিয়ে কোনও আলোচনাই নেই হাতিঘিসাজুড়ে।
তবে হাতিঘিসা সেবদোল্লাজোতে কানু সান্যালের বাড়ি নতুন করে লাল রংয়ের টিন দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। বাড়ির সামনেই লালঝান্ডা। পেছনের বাড়িগুলিতে উড়ছে জয় শ্রীরামের গেরুয়া ঝান্ডা। নকশাল নেতা দীপু হালদার বলেন, ‘অনেকেই সেবদোল্লাজোতে কানুবাবুর বাড়িকে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় মনে করেন। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ আমাদের বিচারধারা সিপিএম থেকে আলাদা। এই বাড়িটি আমাদের দলীয় কার্যালয়। যাঁরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দলের থেকে ব্যক্তিস্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা দলীয় কার্যালয় কীভাবে বানাবেন।’
সিপিএমের মতো বিজেপিও হাতিঘিসায় কোনও দলীয় কার্যালয় তৈরি করতে পারেনি। তবে ক্ষমতায় এলে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকেও বড় কার্যালয় তৈরি করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দিলেন হাতিঘিসা বিজেপির মণ্ডল সভাপতি কেশব রায়। তাঁর কথায়, ‘ইদানীং আমাদের দলের পতাকার চাহিদা খুব বেশি। নিঃশব্দে হাওয়া আমাদের দিকে বইছে।’ কাওয়াখালির জনসভায় মোদি কী বলেন তা শুনতে এখান থেকে অনেকেই শিলিগুড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানালেন তিনি।