জলপাইগুড়ি: লোকসভা ভোটের মুখে ছিটমহল ইস্যুতে তৃণমূলকে সমর্থন না করার হুঁশিয়ারি দিল প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। অভিযোগ, ছিটমহল বিনিময়ের আট বছর পরও ভারতীয় ছিটমহলের মূল উদ্বাস্তু বাসিন্দাদের জমি ও সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ আজও দেয়নি রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তদন্ত করে খতিয়ে দেখার পরও কোনও ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়নি। এতদিন তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করে এসেছেন, তাই লোকসভা ভোটের আগে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে রাজ্য সরকার কোনও সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ না করলে তৃণমূলের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেবেন ২৫ হাজার পরিবারের প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। রবিবার জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে এই হুঁশিয়ারি দিলেন উত্তরবঙ্গ ছিটমহল উদ্বাস্তু সংগ্রাম কমিটির যৌথ সম্পাদক ইসমাইল মিয়াঁ। তবে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে রাজ্য যদি ভারতীয় ছিটমহলের প্রকৃত নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য চিঠি দেয়, তবে তাঁরা বিষয়টি নতুন করে ভাববেন বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, কোচবিহার রাজার অধীনে থাকা জলপাইগুড়ি জেলা সংলগ্ন ভারতীয় ৭৮ নম্বর গরাতি ছিটমহল, নাটকটোকা, বেহুলাডাঙ্গি, নাজিরগঞ্জের মতো ১৮টি ছিটমহল গ্রামে প্রায় ৪০ হাজার ভারতীয় বাসিন্দা ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে এই ছিটমহলের বাসিন্দারা বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের অত্যাচারে ঘরছাড়া হয়ে মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসেন। ইসমাইল মিয়াঁ জানান, গরাতি ৭৮ নম্বর ছিটমহলে তাঁর ১৪০০ বিঘা জমি ও বাড়ি ছিল। ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময়ের আগে থেকেই তারা রাজ্য ও কেন্দ্রকে ছিটমহলে থাকার নথিপত্র জমা করে ভারতীয় নাগরিকত্বের দাবি করেছিলেন। কিন্তু তিনি সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি। বরং যাঁদের অত্যাচারে ছিটমহল ছেড়েছিলেন, তাঁরাই ছিটমহলের বাসিন্দা হয়ে ক্ষতিপূরণের সুবিধা পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
নাজিরগঞ্জ ভারতীয় ছিটমহলের উদ্বাস্তু বাসিন্দা জ্যোতির্ময় রায় জানান, তাঁর নাজিরগঞ্জ ছিটমহলে ৯০০ বিঘা জমি ছিল। এখনও তিনি এক টাকাও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাননি। উত্তরবঙ্গ ছিটমহল উদ্বাস্তু সংগ্রাম কমিটির সহকারী সম্পাদক বাবলু রায় বলেন, ‘যতদূর জানি, ছিটমহল বিনিময়ের পর ক্ষতিপূরণ বাবদ কেন্দ্র থেকে রাজ্যকে ৩ হাজার ৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। আমরা তো কেউ ক্ষতিপূরণ পাইনি। তাহলে কোথায় গেল সেই টাকা?’ সংগঠনটির সভাপতি জগদীশ রায়প্রধানের কথায়, ‘ছিটমহল বিনিময়ের সময় ৩৭ হাজার মানুষ ক্ষতিপূরণের তালিকায় নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। আমরা প্রকৃত ছিটমহলবাসীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম। এরপর একলাফে ৩৭ হাজার সংখ্যাটি ৯০০-তে নেমে এসেছিল। কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ না দিলে রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কেন্দ্র সরকারকে যদি চিঠি লিখে দেয়, তাহলে আমরা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কেন্দ্রকে চাপ দিতে পারব।’
বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, ‘ছিটমহল বিনিময়ের ক্ষতিপূরণের টাকাও রাজ্য সরকার অন্য খাতে ব্যয় করেছে। এই রাজ্য সরকার সবকিছুতেই দুর্নীতি করেছে।’ তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী মহুয়া গোপের কথায়, ‘কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ে মিলেই ছিটমহল বিনিময় করেছিল। আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও যৌথভাবেই করা হয়েছিল। এখন ভোটের মুখে বিজেপি রাজনীতি করছে।’