শিলিগুড়ি: অবৈধ নির্মাণ (Illegal Construction) ভাঙতে গিয়ে শাসকদলের কর্মী-নেতাদের বাধার মুখে ফিরে যেতে হল পুরকর্মীদের। শুক্রবার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরে চাঞ্চল্য ছড়াল। পুরনিগমের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাতি কলোনির ৩ নম্বর রাস্তায় ওয়ার্ডের তৃণমূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র দেবনাথ সরকারি জমির ওপর অট্টালিকার মতো বাড়ি বানিয়েছেন। ওই বাড়ি ভাঙতে যেতেই বাধার মুখে পড়লেন পুরকর্মীরা ও ম্যাজিস্ট্রেট। পুরকর্মীদের সামনেই বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ওয়ার্ড কার্যালয়ের বিশাল ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। চেয়ার নিয়ে ওই বাড়ির সামনে বসে যান কর্মীরা।
গোটা ঘটনায় তৃণমূলের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির সঙ্গে দলীয় কাউন্সিলারের চলা গোষ্ঠীকোন্দলের বিষয়টিও সামনে আসছে। পুরকর্মীদের আটকাতে সৌমিত্রের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা গিয়েছে ওয়ার্ডের তৃণমূল কমিটির সভাপতি সনাতন বর্মনকে। তাঁর বক্তব্য, ‘এই দিনটার জন্য ২৫ বছরের বাম দুর্গ ভেঙে তৃণমূলকে ওয়ার্ডে আনিনি। সামনে লোকসভা নির্বাচন, কোথায় দলকে উজ্জীবিত করা হবে, সেখানে এইসব হচ্ছে।’ সভাপতির লোক হিসেবেই পরিচিত সৌমিত্র স্থানীয় কাউন্সিলারের (Councilor) নাম নিয়ে সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘কাউন্সিলার চান, ওঁর পায়ের তলায় যেতে হবে। এক মাসে তিনবার নোটিশ (Notice) করানো হয়েছে। পুরনিগমে গিয়ে দেখেছি, উনিই অভিযোগ করেছেন।’ ওয়ার্ডে ৩০০০ বাড়ির মধ্যে ২৮০০ বাড়িই অবৈধ বলে দাবি সৌমিত্রের।
সৌমিত্রের স্ত্রী মামণি দেবনাথ বলেন, ‘বাড়ি তৈরির সময় কাউন্সিলার ১০ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। সেটা না দেওয়ায় উনি এমনটা করছেন।’ কাউন্সিলার অমরানন্দ দাসের বক্তব্য, ‘সৌমিত্রের স্ত্রী যা অভিযোগ এনেছেন, সেটা ওঁকে প্রমাণ করতে হবে। নইলে আমি আইনের দ্বারস্থ হব।’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘ওঁরই এক প্রতিবেশী আমার কাছে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ করেছিলেন। আমি অনেকবার সৌমিত্রকে ডেকেছিলাম। তবে উনি আসেননি। পরে শুনলাম, পুরনিগম থেকে তিনবার নোটিশ হয়েছে। মামলাও হয়েছে। আদালতের রায়ে এরপর পুরনিগম ভাঙতে এসেছে।’
অবৈধ নির্মাণ বাঁচানোর ব্যাপারে মেয়র গৌতম দেবের কাছেও একাধিকবার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন সৌমিত্র। তাঁর বক্তব্য, ‘গৌতমবাবু বলেছিলেন হোল্ড করাচ্ছি। এরপর বললেন, নির্মাণ ভাঙার ব্যাপারে সই হয়ে গিয়েছে। সামান্য ভাঙা হবে।’ যদিও এমন ঘটনা নিয়ে গৌতম দেবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘গোটা বিষয়টাই পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’ এদিকে, এদিন উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রধাননগর থানার পুলিশ এলাকায় এসে হাজির হয়। অবৈধ ওই নির্মাণ ভাঙতে গেলে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয় পুরকর্মীদের মধ্যে। প্রধাননগর থানার আইসি বাসুদেব সরকার পুরকর্মীদের পাশাপাশি অবৈধ ওই নির্মাণকারী ও বিক্ষোভরত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। যদিও শেষপর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলে ফিরে যান অবৈধ ওই নির্মাণ ভাঙতে আসা পুরকর্মীরা।