পঙ্কজ মহন্ত, বালুরঘাট: এক দুই লক্ষ নয়। ঘাড়ের ওপর ৩৭ লক্ষ টাকা বকেয়ার বোঝা নিয়ে চলছে জেলা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান। কর্মীদের বেতন দিয়ে দোকান সামলাতে হিমসিম অবস্থা কর্তৃপক্ষের। তবে ক্রেতার সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমেছে বলে দাবি দোকানের এক কর্মচারীর। আরও অভিযোগ চিকিৎসকদের জেনেরিক ওষুধের নাম লেখার কথা থাকলেও অনেকে তা মানছেন না। একাধিক চিকিৎসক কোম্পানির নাম উল্লেখ করে দিচ্ছেন। ফলে ক্রেতারা ফিরে যাচ্ছেন। যদিও বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের তরফে রাকেশ দাস জানান, ‘হাসপাতাল ও বহির্বিভাগের প্রেসক্রিপশন ছাড়াও এখন বাইরের প্রেসক্রিপশন দেখেও রোগীরা ওষুধ নিয়ে যান। যে কোনও মূল্যের উপর ফ্ল্যাট ৬০.৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। প্রেশার, সুগার সহ অন্য রোগীরাও আসেন। ৯০ শতাংশ ওষুধ পাওয়া যায়। ডাক্তারদের ওষুধের জেনেরিক নাম লেখার কথা। কিন্তু অনেক ডাক্তার ওষুধের ব্র্যান্ড নাম লিখছেন। অনেকে কোম্পানির নাম মিলিয়ে ওষুধ কিনতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আগে দিনে প্রায় ৪০০ জন আসতেন। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমরা ওষুধের কম্পোজিশন দেখে ওষুধ দিই। কিন্তু সরকারের কাছে ৩৭ লক্ষ টাকা বকেয়া হয়ে গিয়েছে। বহুবার দরবার করেছি। কবে পরিশোধ হবে জানা নেই।’
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সুদীপ দাস বলেন, ‘কোন পরিস্থিতিতে, কোন খাতে ওষুধগুলি নেওয়া হয়েছে আমার এই মুহূর্তে জানা নেই। তবে এত পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছে নেই। সেই ফান্ড রাজ্য থেকেই আসবে। আমার কাছে নির্দিষ্ট মারফত বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আবেদন আসলে, নিশ্চয়ই তা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলব। যদি ওষুধ কনজিউম করা হয়ে থাকে। তাহলে সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তারা অবশ্যই সেই অর্থ পেয়ে যাবেন। আমি খতিয়ে দেখছি।’
মঙ্গলপুর এলাকা থেকে এই দোকানে ওষুধ কিনতে এসেছিলেন ভ্যানচালক সুনীল মালাকার। তাঁর কথায়, ‘ডাক্তারবাবুরা যে ওষুধ লিখে দেন, সেগুলি এখানে হামেশাই পাওয়া যায়। টাকার অভাবে যদি এই দোকান উঠে যায়। তাহলে আমাদের পক্ষে বাইরের দোকান থেকে ওষুধ কেনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।’
রাজ্য স্বাস্থ্য নীতির নিয়ম মেনে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা প্রায় সমস্ত ওষুধই এই দোকানে মজুত রাখা হয়। কিন্তু ক্রমশ ওষুধ কেনা টাকার বকেয়া মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। যা বর্তমানে বিপুল অঙ্কে গিয়ে পৌঁছেছে। রোগীদের ওষুধ বিক্রিও হচ্ছে দোকান থেকেই। রোগীরা জেলা হাসপাতালের দ্বিতীয় গেটে ঢুকে এই দোকান থেকে নিমেষেই ওষুধ কিনতে পারেন। প্রথম পর্যায়ে হাসপাতাল ও বহির্বিভাগে ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ এখানে পাওয়া যেত। এখন বাইরের চেম্বারে দেখানো ডাক্তারের ওষুধও এই দোকানে সহজলভ্য। তবে শুধু ওষুধের কম্পোজিশন অনুযায়ী জেনেরিক ওষুধ পান গ্রাহক তথা রোগীরা। প্রতি বছর ভারত থেকে যেখানে ৪৫ হাজার কোটি টাকার জেনেরিক ওষুধ বাইরের দেশে রপ্তানি করা হয়। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বকেয়া অর্থের পরিমাণ দেখে চোখ কপালে উঠতে পারে অনেকেরই।