শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি এবং আন্দোলনকারী দুই কর্মী নেতাকে সাসপেন্ড করতে রাজ্যপালের নির্দেশের বিরুদ্ধে একজোট উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (University of North Bengal)। রাজ্যপালের (Governor) নির্দেশ খারিজ করার জন্য ৪ মার্চ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে (Vice Chancellor) সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবপক্ষ। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন আন্দোলন রাজ্যে আগে দেখা যায়নি। আন্দোলনে ইন্ধন দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) বলেছেন, ‘পরিয়ায়ী উপাচার্যরা এ রাজ্যে এসে তৃণমূলের ছেলেদের সাসপেন্ড করবেন! একবার করেই দেখুন না কী হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে বিভিন্ন সংগঠন। তাতে কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। সমস্যা মেটাতে শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপন রক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত প্রশাসনিক প্রধান, সমস্ত বিভাগীয় প্রধান, সবক’টি কর্মী ও শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদক সভাপতিদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। বেলা ১২টা থেকে টানা সাড়ে চার ঘণ্টা উপাচার্যের সভাকক্ষে আলোচনা হয়। সেখানেই লিখিতভাবে রাজ্যপালের নির্দেশের বিরুদ্ধে একজোট হন সবাই।
সভার সিদ্ধান্তে লেখা হয়েছে, ‘রাজ্যপালের নির্দেশ অনুসারে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রন বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা ৪ মার্চের মধ্যে বাতিল করতে হবে৷ তা না হলে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বহাল রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সবপক্ষ ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে ক্ষমতা প্রদান করল।’ সেই রেজোলিউশনে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিক প্রত্যেকে স্বাক্ষর করে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের কথায়, ‘সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে পাঠানো হয়েছে। তিনি কী উত্তর দেন, তার অপেক্ষা করছি আমরা।’ তবে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকায় যে প্রশাসনিক অচলবস্থা তৈরি হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বপন। তাঁর কথা, ‘আমরা অসহায়ের মতো দিন কাটাচ্ছি। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। বেতন, স্কলারশিপের টাকা সব আটকে আছে। কী যে হবে বুঝতে পারছি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অচলাবস্থা আর কতদিন চলবে? ব্রাত্যর উত্তর, ‘আমরা সবটাই সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছি। কিন্তু তারিখের পর তারিখ দেওয়া হচ্ছে। কেন দেওয়া হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমরাও এই পরিস্থিতির বদল চাই।’ এদিন সকালে বাগডোগরা বিমানবন্দরে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতির কথা জানান তাঁরা।
শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতা রণজিৎ রায়ের বক্তব্য, ‘যতক্ষণ না দাবি মানা হবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকর্মী সংগঠনের সম্পাদক লালন চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শিক্ষাকর্মী সকলেই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এইভাবেই প্রতিবাদ চলবে।’