প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: শুনতে আশ্চর্য লাগলেও অদূর ভবিষ্যতে এমন সম্ভাবনাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে ভারত সরকারের উদ্যোগে। নয়াদিল্লিতে রেল মন্ত্রক সূত্রের দাবি, অদূর ভবিষ্যতে আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হতে পারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন। আর এই ট্রেনের জোগান দেবে কলকাতা শহর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা ‘টিটাগড় রেল ওয়ার্কস সিস্টেমে’র উত্তরপাড়া ইউনিট।
এই মুহূর্তে বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে থাকলেও এই মর্মে প্রাথমিক উদ্যোগ যে শুরু হয়েছে সেকথা স্বীকার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দাপিয়ে রাজত্ব করা ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের সার্বিক সাফল্যে উত্সাহিত হয়েই এবার গোটা বিশ্বের বাজারে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন রপ্তানির কথা ভাবছে ভারত সরকার, সাফ জানানো হয়েছে রেল মন্ত্রক সূত্রে। আর এই নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের অধিকাংশ কোচ তৈরি হবে বাংলা থেকেই, বলা ভালো কলকাতার অদূরে উত্তরপাড়ায় স্থিত ‘টিটাগড় রেল ওয়ার্কস’ থেকে। এই মর্মে শুরু হয়েছে প্রাথমিক স্তরের আলোচনাও৷
তাত্পর্যপূর্ণ হল, ‘বন্দে ভারত’ রপ্তানির ভাবনার সার্থকতার অনেকটাই নির্ভর করছে ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের সার্থকতার উপরে। এই মুহূর্তে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের বেশ কিছু জরুরি যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে ভারত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ে ইউক্রেনে তৈরি হওয়া এমন বেশ কিছু যন্ত্রাংশ আমদানি নিয়ে জটিল সমস্যায় পড়েছিল ভারত। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এবার জোর দেওয়া হয়েছে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের ১০০ শতাংশ যন্ত্রাংশ দেশের মাটিতেই বানানোর। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন শিল্প সংস্থা ইতিমধ্যেই এই কাজ শুরু করে দিয়েছে জোর কদমে।
উল্লেখ্য, এর মধ্যেই বাংলার ‘টিটাগড় রেল সিস্টেমস লিমিটেড’-র মত সংস্থাও আছে, যারা ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের কোচ তৈরি করছে ভারত হেভি ইলেকট্রিকালস লিমিটেড বা ‘ভেল’-র সঙ্গে যৌথ সহযোগিতায়৷ বুধবার নয়াদিল্লিতে ‘টিটাগড় রেল সিস্টেমস’-র শীর্ষ কর্তা পৃথ্বীশ চৌধুরী জানান, তাদের এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার কথা৷ ৮০টি বন্দে ভারত ট্রেনের কোচ তৈরি করছি আমরা উত্তরপাড়ার কারখানায়৷ এক একটি ট্রেনে ১৬টি করে কোচ থাকবে৷ অর্থাৎ মোট ১২৮০টি কোচ বানাবো আমরা৷’ এইসব কোচই অদূর ভবিষ্যতে পাড়ি দেবে ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। এদিন স্বয়ং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র ‘টিটাগড় রেল ওয়ার্কস’-এর ভূয়সী প্রশংসা করেন। রেল মন্ত্রক সূত্রের দাবি, সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের মধ্যেই ইউরোপ, আফ্রিকার মত দেশে ভারতে তৈরি ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন রপ্তানি সম্ভব হবে।