প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক মুহূর্তে আগামী ২১-২২ নভেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে চলা ‘৭ম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’ (বিজিবিএস) কে পাখির চোখ করে পরিকল্পনা রূপায়নে ব্যস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ প্রতিবারের মতো চলতি বছরেও আন্তর্জাতিক এই শিল্প সম্মেলনকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে, বিশেষ করে রাজ্যের শিল্পায়নে বিদেশি মূলধন এবং বিনিয়োগের সুযোগ প্রসঙ্গে নজর টানতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার৷ সেই উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার দিল্লির তাজ প্যালেসে ৪০টি দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্র৷ রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনা কতটা, বাংলায় বিনিয়োগ করা হলে ভিনদেশি শিল্পপতিরা কি কি সুবিধা পাবেন, রাজ্য সরকার তাদের প্রতি কিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে সবকিছুই অমিতবাবু ব্যাখ্যা করেছেন পররাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সামনে৷ রাজ্য শিল্প বিভাগের তরফে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের (পিপিটি) মাধ্যমে তুলে ধরা হয় এই মুহুর্তে গোটা বাংলায় শিল্পায়নের ব্লু প্রিন্ট৷
রাজ্য সরকারের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা অমিত মিত্রর সঙ্গে এদিনের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ১০টি দেশ, পূর্ব ইউরোপের ৮টি দেশ, আশিয়ান দেশগুলি, সৌদি আরব, কোরিয়া, জাপান, কেনিয়া এবং কলম্বিয়ার কূটনীতিকরা৷ এদিনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিরূপে উপস্থিত ছিলেন বিদেশ মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) সি রাজাশেখর৷ দিল্লিতে তাজ প্যালেস হোটেলে আয়োজিত এই বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে অমিতবাবুর আশা গত বারের ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাত্রাকে ছাপিয়ে যাবে এবারের বিজিবিএস৷
প্রসঙ্গত, এবারের বিজিবিএসে রাজ্য সরকারের তরফে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রকে ‘ফোকাল থিম’ হিসেবে তুলে ধরা হবে। অমিতবাবুর ভাষায় এগুলি হলো ‘গেম চেঞ্জার’। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে সেক্টরটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তা হল ‘মাইনিং’ বা খনন শিল্প৷ এর মধ্যে থাকছে কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, কোল বেড মিথেন বা সিবিএম এবং সেল গ্যাস৷ রাজধানী দিল্লির মতোই কলকাতা এবং তার আশপাশের এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সরবরাহের বিষয়টিকে বিজিবিএসে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপিত করতে চাইছে রাজ্য সরকার৷ এর পাশাপাশি এবারের আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগে (এমএসএমই) বাংলার সাফল্যের বিবরণও তুলে ধরবে রাজ্য সরকার৷
অমিত মিত্রর দাবি, এমএসএমই ক্ষেত্র বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টরকে কাজে লাগিয়ে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য। গত আর্থিক বছরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পদ্যোগে ২ লক্ষ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণ দিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাংক৷ প্রতি কোটি টাকা প্রকল্প ঋণে ৩৭ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি করেন অমিত মিত্র৷ তাঁর দাবি অনুযায়ী, ২ লক্ষ কোটি টাকা প্রকল্প ঋণে মোট ৭৪ লক্ষ কর্মসংস্থান হতে পারে রাজ্যে৷ অতীতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজ্য ১.০৪ লক্ষ কোটি এবং ২০২০-২৩ অর্থবছরে ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেছে ব্যাংকগুলি, গত বছর সেই মাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ কোটি টাকা। অমিতবাবুর দাবি, এর সুফল পড়বে রাজ্যের জিডিপিতে৷
পাশাপাশি কলকাতার সিলিকন ভ্যালি, লেদার ও সিমেন্ট হাব এবং হিউম্যান হেয়ার (পরচুলা শিল্প) সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদী রাজ্য সরকার৷ পশ্চিমবঙ্গে শিল্পবান্ধব পরিবেশে জমি অধিগ্রহণজনিত কোনও সমস্যা নেই বলেও এদিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অমিত মিত্র৷ ইতিমধ্যে নির্বাচনি দামামা বেজে উঠলেও এবারের বিজিবিএসে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বতোভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে, আশাপ্রকাশ করেন তিনি৷ এই মর্মেই অমিতবাবু বলেন, ‘ভুললে চলবে না দেশের রাষ্ট্রপতি স্বয়ং আমাদের শিল্প সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন৷ অতীতে দেশের অর্থমন্ত্রী, সড়ক পরিবহণমন্ত্রীরাও এই আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন৷’ এবারেও কেন্দ্র সরকারের তরফে একইরকম সক্রিয় অংশগ্রহণ হবে বলে আশাবাদী অমিত মিত্র।