নীহাররঞ্জন ঘোষ, মাদারিহাট: স্বামীকে খড়্গ দিয়ে সমানে গুঁতিয়ে চলেছে পাহাড়ের মতো দেখতে এক গন্ডার(Rhino)। আর তাঁকে বাঁচাতে হাতে লাঠি নিয়ে গন্ডারের পিঠে সমানে পিটিয়ে চলেছেন স্ত্রী(Wife)। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে এই অসম লড়াই। শেষপর্যন্ত স্বামীকে ছেড়ে গন্ডারটি একটু দূরে সরতেই কোনওরকমে স্বামীকে(Husband) রক্তাক্ত অবস্থায় তুলে সোজা মাদারিহাট গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের নর্থ বিটের জঙ্গলে। জখম ব্যক্তির নাম গোবিন্দ দে। তাঁর স্ত্রীর নাম ললিতা দে। বাড়ি মাদারিহাট মেঘনাদ সাহানগরে। জখম গোবিন্দর শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাঁকে আলিপুরদুয়ার নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপাতত সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে।
গোরুর জন্য ঘাস আনতে অন্য কয়েকজনের সঙ্গে ললিতারা স্বামী-স্ত্রী মিলে গতকাল বিকেলে জলদাপাড়ার জঙ্গলে গিয়েছিলেন। হঠাৎই গাছপালার আড়াল থেকে বিশালাকার একটি গন্ডার দৌড়ে আসে। সটান আক্রমণ করে গোবিন্দকে। খড়্গ দিয়ে গুঁতিয়ে বাঁ হাত ভেঙে দেয়। পিঠে গুঁতো দিয়ে ফুলিয়ে দিয়েছে। তাঁর বাঁ পায়ের ঊরুতে গুরুতর আঘাত লেগেছে।
এ ব্যাপারে জলদাপাড়া নর্থ রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার রামিজ রজারকে ফোন করলেও ধরেননি। তবে বন দপ্তর(Forest Department) সূত্রে জানা গিয়েছে, যেহেতু জঙ্গলের ভেতর ঘটনা সেইজন্য চিকিৎসার কোনও খরচ ওই ব্যক্তি পাবেন না।
ললিতা জানালেন, প্রথমে তো ভেবেই পাচ্ছিলাম না যে কী করব। সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা তো পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সঙ্গীরা ফিরে আসেন। স্বামীর ক্ষতস্থান গামছা দিয়ে বেঁধে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু গন্ডারের এত কাছে গিয়ে লাঠি দিয়ে আঘাত করার সাহস কোথা থেকে পেলেন? ললিতার জবাব, ‘তখন স্বামীর প্রাণ বাঁচানোর কথাই কেবল মাথায় ছিল। আর কিছু মনেই আসেনি।’ যদিও গন্ডারের মোটা চামড়া ভেদ করে ললিতার আঘাত কতখানি ‘ছাপ’ ফেলেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। ললিতা নিজেও তো বলছেন, ‘গন্ডারের পিঠে লাঠি দিয়ে মারলেও ও মনে হয় কিছুই টের পায়নি। কারণ পেছন থেকে মারলেও একবারও আমাকে ঘুরে দেখেনি। ঘুরলে কী হত জানি না। তবে স্বামীকে বাঁচাতে পেরেছি, এটাই বড় কথা।’
ওই দলে থাকা একজনের কথায়, গন্ডারটি গোবিন্দকে আক্রমণ করতেই ওঁর স্ত্রী লাঠি দিয়ে গন্ডারের পিঠে পেটাতে থাকেন। কিন্তু গন্ডারের তাতে কোনও হুঁশ ছিল না। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে এই অসম লড়াই চলে। এরপর বাকি সঙ্গীরাও চিৎকার করতে থাকেন। সকলেই বলছেন, ‘কপাল ভালো গন্ডারটি মহিলাকে আক্রমণ করেনি।‘
জখম গোবিন্দ অসমে থাকেন। সেখানে রান্নার কাজ করেন। বাড়িতে কালীপুজো ছিল বলে এলাকায় এসেছিলেন। আগামী রবিবার তাঁর আবার অসমে চলে যাওয়ার কথা।