গাজোলঃ উত্তর ২৪ পরগনার খড়দা থানার সোদপুর এলাকার ছোট্ট মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া অনন্যা মণ্ডল। বয়স মাত্র ১৭। চোখে হাজারও স্বপ্ন। আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলে পরিবার। তার মাঝেও পড়াশোনা করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর স্বপ্ন দেখে ছোট্ট অনন্যা। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে ধরা পড়ে তার ব্লাড ক্যান্সার। আর তারপর থেকেই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে সব স্বপ্ন। চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে অনন্যা। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এক ঝাঁক ছাত্রছাত্রী। যেভাবেই হোক সারিয়ে তুলতে হবে অনন্যাকে। তাই আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে দরজায় দরজায় ঘুরছে হার না মানা এক ঝাঁক পড়ুয়া।
খড়দার সোদপুরের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে অনন্যা মন্ডল (১৭)। সে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা অজয় মণ্ডল একজন গাড়ি চালক। তার মা তুলসী মণ্ডল পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। গত মে মাসে ধরা পড়ে তার ব্লাড ক্যান্সার। তারপর থেকে কলকাতার নিউটাউনে টাটা মেডিকেল সেন্টারে চলছে তার চিকিৎসা। কিন্তু গরিব পরিবারের হওয়ায় সেই রোগের চিকিৎসা করানো প্রায় দুষ্কর হয়ে উঠেছে অনন্যার পরিবারের কাছে। তবে সোদপুরের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ এবং স্থানীয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ কিছুটা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর থানার ঘটকপুকুর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে অনন্যা। সেখান থেকেই নিউটাউনের টাটা ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে অনন্যার।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনন্যার অবস্থার কথা জেনেছে অনেকেই। গাজোল ব্লকেরও বেশ কিছু পড়ুয়া জানতে পেরেছে অনন্যার মারনরোগের কথা। আর অনন্যার পাশে দাঁড়াতে গিয়ে হাতে কৌটো নিয়ে গাজোলের হাটে-বাজারে এবং বিভিন্ন মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তারা। প্রশান্ত রাজবংশী, লব সরকার, মৌমিতা বর্মন, লতা মির্ধার মতো এক ঝাঁক ছাত্রছাত্রীরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন অনন্যার চিকিৎসার জন্য অর্থসংগ্রহে। সকলকে জানাচ্ছে অনন্যার কথা। সকলেই যাতে অনন্যার পাশে দাঁড়ান তার আবেদন নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দরজায় দরজায়।
এদিন দেখা গেল কৌটো নিয়ে বিভিন্ন দোকান এবং সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে সেই খুদে পড়ুয়ারা। প্লাস্টিকের কৌটাতে ছাপানো রয়েছে অনন্যার ছবি। সঙ্গে আর্থিক সহযোগিতার জন্য প্ল্যাকার্ড এর মাধ্যমে আবেদন এবং মেডিকেল রিপোর্ট। পাশাপাশি অনন্যার সুস্থতা কামনার জন্য প্রার্থনা করার আবেদনও জানাচ্ছে ওই পড়ুয়াদের দল। প্রশান্তদের বক্তব্য, হয়তো অন্য জেলায় বাড়ি অনন্যার। কিন্তু সে একজন ছাত্রী। তাই ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে তারাও দাঁড়িয়েছে অনন্যার পাশে। অনন্যার এই কঠিন লড়াইয়ে তার পাশে দাঁড়াতে চায় তারা। নিজেরাও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। তাই কৌটো হাতে আর্থিক সাহায্যের জন্য যেমন সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে, তেমনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ যাতে অনন্যার জন্য প্রার্থনা করে তার আবেদনও রাখছে তারা। দুই সপ্তাহ ধরে তারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এইভাবে অর্থ সংগ্রহ করবে। এরপর সংগৃহীত অর্থ তুলে দেওয়া হবে অনন্যার হাতে।
ছাত্র-ছাত্রীদের এই আবেদনে সাড়া দিচ্ছেন প্রচুর মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন চক্রবর্তী জানালেন, ‘যেভাবে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন ছাত্রীর জন্য এই এলাকার ছাত্রছাত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যে যেমন পারছেন সাহায্য করছেন। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করব খুব তাড়াতাড়ি যেন সুস্থ হয়ে ওঠে অনন্যা’।