পলাশবাড়ি: প্রায় ৭৯ বছর ধরে মেজবিল লোকদেবতার পুজোর দায়িত্ব সামলেছেন পুরুষরা। কিন্তু এবারের পুজোটা একটু অন্যরকম। কারণ, এবার পুজোর দায়িত্বে ছিলেন সোনালি বর্মন, মিনতি বর্মন, বাবলি বর্মনরা। প্রায় আট দশকের পুরোনো পুজোর শুরু থেকে শনিবার ভোগপ্রসাদ বিতরণ পর্যন্ত সব দায়িত্বই সামলালেন তাঁরা।
রাসমেলায় এই লোকদেবতার পুজো হয় ঠিকই। কিন্তু মেজবিল লোকদেবতার আদি পুজোর জায়গা মেজবিল জলাশয়ের পাশে। তিথি মেনে শুক্রবার রাতে সেখানেই পুজো করা হয়। সারারাত ধরে পুজো হওয়ায় রাত জেগেছেন স্থানীয়রা। এদিন দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মানুষ খিচুড়ি প্রসাদ খেয়েছেন।
পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মেজবিল মৌজার প্রায় আশি বছরের পুরোনো পুজোয় এবার মহিলারা কেন পুজো সামলালেন? জানা গেল, আগে যাঁরা পুজোর দায়িত্বে ছিলেন, সেই প্রবীণ বাসিন্দাদের অনেকেই বেঁচে নেই। তাছাড়া, তরুণদের মধ্যেও পুজো নিয়ে আগ্রহ কম। মাঝের কয়েক বছর বেশ সাদামাঠাভাবেই পুজো হত। স্থানীয় পুরুষদের অনেকে পরিযায়ী শ্রমিক। কয়েকজন বাড়িতে থাকলেও কাজের ব্যস্ততায় পুজোর আয়োজন করার দায়িত্ব নিতে পারেননি তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় মহিলারা। পুজোর কয়েকদিন আগেই ব্যবস্থা, আয়োজন নিয়ে মিটিং করেন পুতুল, নিভারা। প্রথমবার দায়িত্ব পাওয়ায় খুশি তাঁরাও। শুক্রবার রাতে ব্যান্ডপার্টির বাজনা বাজিয়ে শিশাগোড় থেকে প্রতিমা আনা হয়। তবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ায় মাইক বাজানো হয়নি। পুজো করেন পুরোহিত খোকন চক্রবর্তী।
পুজো উদ্যোক্তা সোনালি বর্মনের কথায়, ‘এবার থেকে আমরাই প্রত্যেকবার এই পুজোর আয়োজন করব। কারণ এখন পুরুষদের মধ্যে পুজো নিয়ে অনীহা দেখা দিয়েছে। পুজোর জন্য প্রায় কুড়ি হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই টাকা সংগ্রহ করা হয়। তবে মূল দায়িত্বে না থাকলেও পুজোর রাতে পুরুষদের কেউ কেউ সহযোগিতা করেন বলে পুতুল সরকার জানিয়েছেন। এদিন নিজেদের কর্মব্যস্ততার কারণে উদাসীনতার কথা মেনে নেন চন্দন সরকার, কৃষ্ণপদ বর্মনরা।
মেজবিল দেবতার পাশাপাশি পুজো হয়েছে ‘পাগলা’ ও ‘পাগলি’ লোকদেবতারও। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে মেজবিল মৌজার ইতিহাস। স্থানীয়দের মতে, এক-দেড়শো বছর আগে এখানে বিশাল জলাশয়ের পাশে মেচ জনজাতির মানুষের বসবাস ছিল। পাশে জলদাপাড়া বনাঞ্চল। বাঘের ভয়ে মেচরা এক দেবতার পুজো করতেন। এভাবে এলাকার নাম হয় ‘মেচবিল’। এখন ‘মেজবিল’। এখন অবশ্য মেচ জনজাতির একটি পরিবারও এখানে নেই। তবে, ওই লোকদেবতাকে আপন করে নিয়েছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়দের দাবি, মেজবিল ঠাকুরের একজন দারোয়ান ছিলেন। আরেকজন ছিলেন মেয়ে। এই দুজনকে ‘পাগলা’ ও ‘পাগলি’ রূপে একই সঙ্গে পুজো করা হয়৷ বলিপ্রথা চালু নেই। মূল প্রসাদ মদ ও মোরগ।