Wednesday, May 15, 2024
Homeউত্তর সম্পাদকীয়এখনই ভোট হলে গদিতে ফের ট্রাম্প

এখনই ভোট হলে গদিতে ফের ট্রাম্প

ট্রাম্পের মতো ‘অর্থহীন, দাম্ভিক ও অসৌজন্যমূলক’ মন্তব্য করেননি। কিন্তু সম্ভবত বয়সজনিত বিস্মৃতির কারণে নানা ক্ষেত্রে বিসদৃশভাবে খেই হারিয়েছেন বাইডেন।

  • শুভঙ্কর মুখোপাধ্যায়

সগৌরবে আসিতেছে, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’!

ভোটজ্যোতিষীরা প্রায় নিশ্চিত, এখনই নির্বাচন হলে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে ড্যাং ড্যাং করে জিতবেন ট্রাম্প। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় পাঁচ শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চেয়ে। ইতোমধ্যে, নিন্দুকদের রসিকতায়, মার্কিন মুলুকে নভেম্বর বিপ্লব সমাসন্ন। চার বছর অন্তর ওই নভেম্বর মাসেই আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় কিনা!

তো তদ্দিন ট্রাম্প কি ওই ‘পাঁচ শতাংশ’ ভোট ধরে রাখতে পারবেন? নাকি বাইডেন নেপো হয়ে দই মারবেন শেষ পাতে! তাই নিয়ে শুরু হয়ে গেছে দুই হুজুরের গপ্পো! সবে গেল ‘সুপার টুইসডে’। প্রতিবার আসলি ভোটের আগে একটা মঙ্গলবারে প্রাইমারি ইলেকশন হয় আমেরিকায়। সেখানেই চূড়ান্ত হয়, ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের কে কে শেষপর্যন্ত দেশের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হবেন।

আমেরিকার এই ‘প্রাইমারি’ ব্যাপারটা কার্যত ‘ভারতমার্কা’! ভারতে যেমন ভোটের টিকিট পাওয়া নিয়ে একই দলের দুই বা ততোধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নিজেদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেন, মার্কিন দেশেও প্রায় সেই দৃশ্য দেখা যায়। ফারাক একটাই। ভারতে প্রার্থীপদ চূড়ান্ত করে দলীয় নেতৃত্ব, আর আমেরিকায় ক্যান্ডিডেট ঠিক করে সংগঠনের সমর্থকদের প্রাইমারি ভোট। কিন্তু ডায়ালগ কিংবা স্ক্রিপ্ট একই। এবার যেমন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ছিলেন দলীয় নেতা নিকি হেলি। তাঁরা এতদিন কাছা খুলে একে অপরের মুণ্ডপাত করছিলেন। শেষমেশ অবশ্য নিকিকে গোহারান হারিয়েছেন ট্রাম্প। আর বাইডেনের এবার প্রাইমারি লড়াই ছিল ডিন ফিলিপ্স এবং মেরিয়ান উইলিয়ামসনের সঙ্গে। হারার আগে পর্যন্ত তাঁরা নিন্দা সমালোচনায় এক্কেবারে ধুয়ে দিয়ে গেছেন বাইডেনকে।

এই সবের পরেই একাশি বছরের বাইডেন আর সাতাত্তর বছরের ট্রাম্পকে নিয়ে এগজিট পোল হয়েছে। আর তাতেই ট্রাম্পের পক্ষে বাইডেনের চেয়ে বেশি সমর্থন জমা পড়েছে। ওই সদ্য সমাপ্ত প্রাইমারিকে কেন্দ্র করেই বাইডেনের বিপক্ষে এবং ট্রাম্পের পক্ষে দুটি ঘটনা ঘটেছে, যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।

এক, ডেমোক্র্যাটদের প্রাইমারি ব্যালটে এবার ‘আনকমিটেড’ বলে একটা অপশন ছিল, ভারতের ভোটপত্রে যেমন থাকে ‘নোটা’। দেখা গেছে, নয় নয় করে বেশ ভালোই ভোট পড়েছে এই ‘কাউকেই পছন্দ নয়’ কলামে। অর্থাৎ, ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের একটা অংশ বাইডেনকে পছন্দ করে না! আসল ভোটে কি তারা তাহলে ট্রাম্পকে ভোট দেবে? দুই, গত চার বছর ধরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসে হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার মামলা ঝুলে আছে। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি কেড়ে নেওয়া হল তাঁর দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার। শেষপর্যন্ত সেটা করলও কলোরাডো রাজ্যের আদালত। কিন্তু দেশের সুপ্রিম কোর্ট কলোরাডোর রায় খারিজ করে জানিয়ে দিল, একটা প্রাদেশিক আদালত কখনও জাতির সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভোটপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করতেই পারে না।

ট্রাম্প এতদিন সেটাই বলছিলেন। এবং এটাই এখন ট্রাম্পের ট্রাম্প কার্ড।

অবশ্য ট্রাম্পের ট্রাম্পেটে চড়া সুর বেজে চলেছে গত চার বছর ধরেই। হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ই ট্রাম্প বলেছিলেন, আবার আসিব ফিরে। কারণ তিনি জানতেন, প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ভোট পেয়েও তিনি হেরেছিলেন স্রেফ চার বছর ক্ষমতায় ছিলেন বলে। ঠিক সেই যুক্তিতেই এবার বাইডেন প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ভোট পেলেও হারবেন গত চার বছর ক্ষমতায় থাকার সুবাদে। এক্ষেত্রে যত না কৃতিত্ব ট্রাম্পের, তার চেয়ে বেশি ব্যর্থতা বাইডেনের। সরকারবিরোধী ভোটকে নিজের দিকে টানতেই পারেননি বাইডেন। তিনি এমন কিছু করেননি যা প্রমাণ করতে পারে যে, তিনি ট্রাম্পের থেকে ভালো।

এটা ঠিক, তিনি কখনোই ট্রাম্পের মতো ‘অর্থহীন, দাম্ভিক ও অসৌজন্যমূলক’ মন্তব্য করেননি। কিন্তু সম্ভবত বয়সজনিত বিস্মৃতির কারণে নানা ক্ষেত্রে বিসদৃশভাবে খেই হারিয়েছেন বাইডেন। উপরন্তু, এটা প্রতিষ্ঠিত যে, চিন্তাভাবনা বা কাজকর্মে ট্রাম্প আর বাইডেনের প্রভেদ কিছু নেই। বরং যে কারণেই হোক, বাইডেনের আমলেই আমেরিকার প্রশাসন, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ অনেকটাই নীচের দিকে নামতে শুরু করেছে।

যেমন ধরা যাক, কোভিড। এই ভয়াবহ অতিমারির কারণে সারা পৃথিবীর মতো আমেরিকার অর্থনীতিও মর্মান্তিক মার খেয়েছে। বেকারি তুঙ্গে উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য গগনচুম্বী হয়েছে। খাদ্যসামগ্রীর দাম মধ্যবিত্তদের হাতের বাইরে চলে গেছে। গাড়ির গ্যাস বা তেলের মাশুল গুনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে চাকরিজীবীদের। এইসব জাতীয় সমস্যার আগুন বাইডেন নেভাতে পারেননি। দেশের বিপন্ন অর্থনীতির পরোয়া না করে বাইডেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অযথা নাক গলিয়েছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে, সুদান ও সন্নিহিত দেশগুলির গৃহযুদ্ধে, প্যালেস্তাইন-ইজরায়েল গোলমালে কিংবা ভারতের ধর্মীয় মৌলবাদের উন্মাদনায় বাইডেন কোনও সদর্থক এবং ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারেননি। তাঁরই অযাচিত পদক্ষেপে সারা বিশ্বের কাছে আমেরিকার ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ চেহারাটা ধরা পড়ে গেছে।

আরও আছে। বন্দুকবাজি, বর্ণবিদ্বেষ এবং অভিবাসী ইস্যুর ক্ষেত্রে ন্যক্কারজনক ভূমিকা নিয়েছিলেন ট্রাম্প। এইসব সামাজিক সমস্যার সমাধান করাটাই ছিল ডেমোক্র্যাটদের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির তালিকাশীর্ষে। অথচ এই তিনটি ক্ষেত্রের কোনওটিতেই বাইডেন কোনও নতুন দিশা দেখাতে পারেননি। উলটে ‘ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারস’ আন্দোলন দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছে। তার তীব্রতা খানিক কমলেও আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে শ্বেতসন্ত্রাসের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে গুলি করে গণহত্যার ঘটনা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর দোহাই দিয়ে ট্রাম্পের সুরেই বাইডেন সীমান্তে দেওয়াল তোলার কথা বলছেন। এইসবের সঙ্গে হালে যোগ হয়েছে আমেরিকায় পড়তে আসা ভারতীয় ছাত্রদের ওপর নির্দয় হামলা ও হত্যা।

এই প্রসঙ্গেই আলোচনায় চলে আসবে বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কথা। তিনি একে মহিলা, তার ওপর আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। প্রত্যাশা ছিল, কমলা মার্কিনসমাজে লিঙ্গবৈষম্যের অবসানে সক্রিয় হবেন। এবং সামগ্রিকভাবে তিনি আমেরিকার অনাবাসী ভারতীয়দের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু বাস্তবে পুরুষতন্ত্রের দাঁত নখ বের করে দেওয়া এবং ধর্মের দোহাই দেওয়া গর্ভপাত ইস্যুতে কমলা পাথরপ্রতিমা বনে গেলেন। তাঁরই শাসনকালে আমেরিকায় পড়তে আসা ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের হত্যাকাণ্ড হঠাৎ বেড়ে গেল। অথচ তিনি টুঁ শব্দটিও করলেন না। তাহলে কোন আক্কেলে দেশের ভোটারসংখ্যার ছয় শতাংশ ভারতীয়রা কমলার ‘গুরু’ বাইডেনকে ভোট দেবে?  পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ‘ভারতীয়’ আমেরিকানদের অধিকাংশ ভোটই সাধারণত জমা পড়ে ডেমোক্র্যাটদের ব্যালটবাক্সে। সরকারবিরোধী ক্ষোভের কারণে সেই ভোটগুলো এবার রিপাবলিকানদের জিম্মায় চলে যেতেই পারে!

অতএব, ভোটপণ্ডিতদের ধারণা, এবারের ভোটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন প্রায় অনিবার্য। তবে এটাও ঠিক, ট্রাম্প বা বাইডেন যিনিই আসুন, অদূরভবিষ্যতে আমেরিকার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম। মার্কিন আর্থসমাজ ক্রমশ রসাতলে যাবে, আর দেশের প্রেসিডেন্ট স্রেফ পাদ্রিদের কায়দায় বলে যাবেন, ‘গড ব্লেস আমেরিকা’! ঈশ্বর কি বাঁচাতে পারবেন আমেরিকাকে? বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘দেবতার মন্দিরে কোনও জিজ্ঞাসা নেই। সেখানে শুধুই ভোগ ফুল আর তুলসীপাতা, আর অন্ধকার’!

(লেখক প্রবন্ধকার, আমেরিকার ন্যাশভিলের বাসিন্দা)

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

Darjeeling | পর্যটকদের জন্য সুখবর! এবার এই নয়া রুটে বাসে করেই পৌঁছে যাবেন দার্জিলিং

0
শিলিগুড়ি: পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের গন্তব্য পাহাড়ি শহর মিরিক। তবে এতদিন মিরিক পর্যন্ত বাস পরিষেবা থাকলেও সেখান থেকে দার্জিলিং যেতে গেলে ভরসা করতে হত প্রাইভেট...

Theft Case | গভীর ঘুমে বাড়ির সদস্যরা, গয়না-টাকা নিয়ে চম্পট দুষ্কৃতীদের

0
হেমতাবাদ: গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন বাড়ির সদস্যরা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কার্যত লুঠতরাজ (Theft case) চালাল একদল দুষ্কৃতী। ঘটনার জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হেমতাবাদে। মঙ্গলবার...

Accident | নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দ্রুত গতিতে গাছে ধাক্কা মারুতি ভ্যানের, মৃত ১, আহত ৬...

0
কিশনগঞ্জঃ বুধবার রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি গাছে ধাক্কা মারল একটি মারুতি গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল এক যাত্রীর। গুরুতর আহত হয় আরও...

Neeraj Chopra | ফের সাফল্য, তিন বছর পর দেশের মাটিতে নেমেই সোনা জয় নীরজের

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: তিন বছর পর দেশের মাটিতে ইভেন্টে নেমেই সোনা জয় অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়ার।(Neeraj Chopra) ভুবনেশ্বরে ফেডারেশন কাপে এদিন...

Cooch Behar | পুকুরে স্নান করতে নেমে বিপত্তি, জলে ডুবে মৃত ২ স্কুল পড়ুয়া

0
দেওয়ানহাট: পুকুরে স্নান করতে নেমে বিপত্তি। জলে ডুবে মৃত্যু হল দুই স্কুল পড়ুয়ার। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার-১ (Cooch Behar) ব্লকের ঘুঘুমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের...

Most Popular