ফালাকাটা: পেশার টানে নয়, নেশার টানেই নির্বাচনের আগে বাড়িতে বসে থাকতে পারেন না বছর ৫৬-র আইজুদ্দিন মিয়াঁ এবং তাঁর ছেলে বাপ্পা আলম। তাই লোকসভা ভোটের আগে দেওয়াল লিখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাবা-ছেলে। এখন সব রাজনৈতিক দল থেকেই ডাক পড়ছে তাঁদের। শনিবার দুজনকেই ফালাকাটার শিশাগোড় ও রাইচেঙ্গা এলাকায় দেওয়াল লিখতে দেখা গেল। বাড়ি ফালাকাটা ব্লকের খগেনহাট এলাকায়। তবে ১০-১২ বছর আগে এই পেশায় যে রোজগার হত, এখন অর্ধেকও হয় না বলে দাবি আইজুদ্দিন মিয়াঁর। এদিকে অন্য সময়ে ভিনরাজ্যে থাকলেও ভোটের আগে এখনও বাবাকে সাহায্য করতে বাড়ি ফেরেন বাপ্পা। কিন্তু হাতের লেখার কদর কমায় উভয়েরই আফসোস।
বাড়িতে সামান্য চাষের জমি আছে। নির্বাচন ছাড়া বছরের বাকি সময়ে সেই জমিতেই কৃষিকাজ করেন আইজুদ্দিন। কিন্তু হাতের লেখার এই পেশাও পুরোপুরি ছাড়তে পারছেন না। কেন? আইজুদ্দিনের কথায়, ‘পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। সাংসারিক অভাবের কারণে পড়াশোনা এগোয়নি। ছোট থেকেই হাতের লেখা ভালো। তাই পেটের টানে রংতুলি হাতে তুলে নেওয়া।’
বামফ্রন্ট আমলে এই পেশাতেই মাসে গড়ে ১০-১৫ হাজার টাকা রোজগার হত। কিন্তু কম্পিউটারের ব্যবহার, ফ্লেক্সের প্রচলন শুরু হতেই এই পেশায় টান পড়ে। আইজুদ্দিনের কথায়, ‘তবু নেশার টানে এই পেশা ছাড়তে পারছি না। কারণ, নির্বাচন এলেই সব রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লেখার ডাক পড়ে।’
একটু বেশি রোজগারের আশায় ভিনরাজ্যে কাজে চলে যান আইজুদ্দিনের ছেলে বাপ্পা। তিনি এখন রীতিমতো পরিযায়ী শ্রমিক। তবে সম্প্রতি বাড়ি ফেরেন। কারণ, লোকসভা ভোট। কিন্তু পেশায় টান পড়লেও কেন আসা? বাপ্পার কথায়, ‘আমি ছোটবেলায় বাবাকে দেখে এই কাজ শিখি। তাই নেশাটা আমার মধ্যেও রয়ে গিয়েছে। আর এখন বয়স বাড়ায় বাবাও বেশি চাপ নিতে পারেন না।’ অবশ্য ভোট শেষ হলেই ফের কেরলে পাড়ি দেবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।