রাহুল মজুমদার, বাগডোগরা: বাড়ির গ্যারাজের নীচে টেবিল-চেয়ার পেতে বসেছেন একজন। সামনে বড় হরফে লাগানো প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরির (Pathological Laboratory) ব্যানার। লেখা আছে ‘এখানে রক্ত, মল, মূত্র পরীক্ষা হয়।’ বাগডোগরার (Bagdogra) অলিগলিতে এমন দোকানের ছড়াছড়ি। কিন্তু বাস্তবে সেখানে কোনও প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরির অস্তিত্বই নেই। বিভিন্ন নামীদামি সংস্থার নাম করে বাগডোগরাজুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গজাচ্ছে এমন ল্যাবরেটরি। এগুলি আদতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র। নামীদামি পরীক্ষাকেন্দ্রের নামে সেখানে চলে নমুনা সংগ্রহ। তৈরি হয় রিপোর্টও। কিন্তু ওই রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আদৌ কি নমুনার কোনও পরীক্ষা হয়? নাকি নিজেরাই মনগড়া রিপোর্ট তৈরি করছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি উঠছে। করোনাপর্বে শিলিগুড়ি (Siliguri) শহর ও মহকুমাজুড়ে এমন প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরির বাড়বাড়ন্ত। এদের ওপর স্বাস্থ্য দপ্তরের সরাসরি কোনও নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি নেই। তাই, অনায়াসেই সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে এই কেন্দ্রগুলি। বেশিরভাগ প্রতারণার ঘটনা ঘটছে গ্রামের গরিব মানুষজনের সঙ্গে বলেও অভিযোগ। এব্যাপারে দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক বলেন, ‘এমন কোথায় হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। মানুষ এদের কাছে কেন যাচ্ছে? পুলিশও তো বিষয়টা দেখতে পারে।’
উল্লেখ্য, ২০২০-র করোনাপর্বে পাড়ায় পাড়ায় এই প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি সংস্কৃতির যাত্রা শুরু। মানুষ বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে, বাড়ির গ্যারাজ কিংবা দোকান ভাড়া নিয়ে পোস্টার লাগিয়ে প্যাথলজিকাল ল্যাবরেটরি বলে প্রচার চালানো শুরু করে। বিশেষ করে শহরতলিতে যেখানে প্রশাসনের নজরদারি কম এমন এলাকায় শুরু হয় এই ব্যবসা। চলতেও থাকে রমরমিয়ে। বাগডোগরার গোঁসাইপুর, বিহার মোড় সহ বিভিন্ন চা বাগান এলাকায় একের পর এক নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন নাম দিয়ে খোলা হচ্ছে এমন বহু কেন্দ্র। টার্গেট মূলত গ্রামের সহজ-সরল মানুষজন। যে সমস্ত এলাকার লোকজন সহজে রক্ত, মল-মূত্র, কফ-থুতু সহ যাবতীয় পরীক্ষার জন্য প্যাথলজিকাল লাবরেটরিতে যেতে পারেন না সেই সব এলাকায় এর রমরমা।
এমনই এক ল্যাবরেটরি সূত্রে জানা গিয়েছে, সংগৃহীত নমুনা শহরের নানা নামীদামি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়া হয়। রিপোর্টেরও আবার একাধিক ভাগ। রোগীর আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ল্যাবরেটরির দাম ঠিক হয়। বেশি টাকায় মিলবে অপেক্ষাকৃত নামী ল্যাবের রিপোর্ট। আর কম টাকায় হাতে ওঠে ছোটখাটো ল্যাবের রিপোর্ট। কিন্তু এই রিপোর্টগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। করোনাপর্বে এমন বহু ভুয়ো নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের খোঁজ মিলেছিল। নামী ল্যাবরেটরির নামে ভুয়ো রিপোর্ট দেওয়ার একটি চক্রেরও হদিস মিলেছিল। তাই, গ্রামগঞ্জে গজিয়ে ওঠা এসব নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রগুলির কাজকর্ম ও রিপোর্টের সত্যাতা প্রশাসনিক স্তরে যাচাইয়ের দাবি তুলছেন মানুষজন।