সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি: মদ্যপ অবস্থায় বাইক, গাড়ি চালালে পুলিশ মুখের সামনে যন্ত্র ধরে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু মদ খেয়ে হাসপাতালে গেলে? কিছুই হয় না। তবে আর নয়। জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে (Jalpaiguri Medical College) এবারে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলে পরিজনদের ব্রিদঅ্যালাইজার যন্ত্রের (Breathalyzer Machine) সামনে পরীক্ষা দিতে হবে। সেই পরীক্ষায় ফেল করলে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে এমনটা নয় যে, শুধুমাত্র রোগীর পরিজনদের ক্ষেত্রেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তারক্ষীদেরও ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই পরীক্ষায় মদ খাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়লে ফল মোটেও ভালো হবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আটকদের পুলিশের হাতে দেওয়া হবে। খুব শীঘ্রই এই হাসপাতালে ব্রিদঅ্যালাইজার যন্ত্র বসতে চলেছে।
এমএসভিপি ডাঃ কল্যাণ খান বললেন, ‘হাসপাতালে ইদানীং রাতের দিকে যে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলি ঘটেছে সেগুলির বেশির ভাগের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মদ্যপ অবস্থায় থাকা রোগীর পরিজনরাই এজন্য দায়ী। মদ্যপ অবস্থায় হাসপাতালে ঢোকা বন্ধ করতে আমরা ব্রিদঅ্যালাইজার যন্ত্র ব্যবহার শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নিরাপত্তারক্ষীরা মদ্যপ অবস্থায় ডিউটি করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁদেরও পরীক্ষা করা হবে।’
সংস্কৃতির শহর হিসেবে শহর জলপাইগুডির সুনাম চারদিকে। সেই শহরেরই হাসপাতালে এই ব্যবস্থা চালুর উদোগ সবাইকে চমকে দেওয়ার মতোই। বিশিষ্ট সাহিত্যিক উমেশ শর্মা অবশ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশেই দাঁড়িয়েছেন, ‘রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একাংশ মানুষ এই শহরের সংস্কৃতিকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে নীতি আদর্শ বলে কিছুই নেই। তাই রোগীদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বার্থে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাকে সমর্থন জানাচ্ছি।’
জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে গণ্ডগোল এখন প্রায় রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা গিয়েছে, বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলিতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে বা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে রোগীর পরিজনরা মদ্যপ অবস্থাতেই হাসপাতালে উপস্থিত হচ্ছেন। তাদের হাতে জরুরি বিভাগের পাশাপাশি ওয়ার্ডে কর্মরত চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের বিভিন্ন সময় শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। হাসপাতালের এক কর্মী বললেন, ‘বাইক দুর্ঘটনায় জখম এক তরুণকে সম্প্রতি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। ওই ব্যক্তির পাশাপাশি যাঁরা তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন তাঁরাও মদ্যপ অবস্থাতেই ছিলেন। কোনও কারণ ছাড়াই সবাই মিলে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।’ কিছুদিন আগে ধূপগুড়ির এক বাসিন্দা পেটে যন্ত্রণার কারণে গভীর রাতে হাসপাতালে এসেছিলেন। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মদ্যপ অবস্থায় ঘুম চোখে রোগী দেখছিলেন বলে পরিজনদের অভিযোগ ছিল। তাঁরা প্রতিবাদ করলে নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁদের শারীরিক নিগ্রহ ও সঙ্গে থাকা এক মহিলার শ্লীলতাহানি করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।