সমীর দাস, কালচিনি: কালচিনি ব্লক সদর থেকে কিছুটা দূরে রায়মাটাং চা বাগান। বাগানের ফ্যাক্টরির সামনেটা জনশূন্য। একটু এগিয়ে যেতেই পড়ল বাগানের ২ নম্বর লাইন। আগে ফ্যাক্টরির গেটের সামনে শ্রমিক লাইনে সবসময় ভিড় লেগেই থাকত। শ্রমিকদের কোলাহলে মুখরিত থাকত ফ্যাক্টরি ও সংলগ্ন শ্রমিক লাইনগুলো। কিন্তু এখন শ্রমিক লাইন খাঁখাঁ করছে। গ্রীষ্মের দুপুরে সেই নিস্তব্ধতা যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে বাগানটি। বাগানের ২ নম্বর লাইনে পৌঁছে দেখা গেল, কয়েকজন শিশু ও কিশোর গলি রাস্তায় খেলাধুলো করছে। তাদের একজন অঙ্কুশ তামাংকে জিজ্ঞাসা করতেই কিশোরের জবাব, বাবা-মা বাইরে কাজ করতে গিয়েছেন। দাদু-দিদার কাছেই রয়েছে ওই কিশোর। পড়াশোনা প্রায় লাটে উঠেছে দেখলেই বোঝা যায়। মাঠে ছাগল চড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কাঞ্ছি তামাং। তাঁর কথায়, ‘তিন বছর আগে অবসর নিয়েছি। এখনও পিএফ, গ্র্যাচুইটির টাকা পাইনি। দাবি কোথায় জানাব? ২৫ বছর ধরে তো কখনও বাগান খুলছে আর বন্ধ হচ্ছে।’
শ্রমিক লাইন ধরে এগিয়ে যেতেই বাড়ির উঠোনে বসে নিজেদের আর বাড়ির শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায় মগ্ন ছিলেন শ্রমিক সুনীতা লামা, পিঙ্কি জিম্বা, নামচু দোরজিরা। তাঁরা বললেন, ‘বাগানে তো কোনও নেতা-মন্ত্রী আসেন না। কার কাছে নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরব আমরা?’ শ্রমিক কবিতা রাই বললেন, ‘বাগানে কেউ বলেন না ভাতা পাওয়ার জন্য কার দোরে যেতে হবে আমাদের। শুক্রবার তো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগান থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে জনসভা করতে আসছেন। আপনারা জানেন সেই খবর।’
শ্রমিকরা বলছেন, ‘আমরা এখন আর ভোট, রাজনীতি এসব নিয়ে ভাবি না। তবে হ্যাঁ মুখ্যমন্ত্রীকে আমাদের বাস্তব চিত্র দেখানোর কেউ নেই। তিনি যদি নিজে একবার বাগানে আসতেন তাহলে বুঝতে পারতেন ২৫ বছর ধরে আমাদের জীবন কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে কাটছে।‘
পাশের হসপিটাল লাইনে গিয়ে দেখা গেল, শ্রমিকরা নিজেরাই বাড়ির সামনের নিকাশিনালা সাফাই করছেন। এসব তো পঞ্চায়েতের কাজ। আপনারা করছেন কেন? কৈলাস তিরকি নামের শ্রমিকের মন্তব্য, ‘এই মরশুমে মশামাছির খুব উপদ্রব। শ্রমিক আবাসন ঠিক নেই। পানীয় জলের জন্য মাসে দেড়শো টাকা দিতে হয়। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ওপর আমাদের আস্থা নেই আর। বাগানের জলের ট্যাংকগুলোতেও জল আসে না।’ ফেরার পথে ফ্যাক্টরি গেটের সামনে দেখা হল নির্মল সাহার সঙ্গে। দীর্ঘ বছর ধরে তিনি সেখানে চানামটর বিক্রি করেন। তাঁর কথায়, ‘বাগান বন্ধ থাকায় ব্যবসা কমে গিয়েছে ৬০ শতাংশ।‘