শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ছোট-বড় মিলিয়ে এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গে বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা কুড়ি। লোকসভা নির্বাচনের আগে জনতার মন জয়ে প্রতিশ্রুতির ডালি নিয়ে হাজির রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস, কেন্দ্রের বিজেপি। তবে বন্ধ বাগানের তালার চাবির সন্ধান কোন পথে, শ্রমিকদের সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমসিম দশা প্রার্থী থেকে তাবড় নেতাদের। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে নারাজ বাম ও কংগ্রেস। তারা দুষছে পদ্ম এবং জোড়াফুল শিবিরকে। সবমিলিয়ে এবারের ভোটে বন্ধ বাগান যে বড় ইস্যু হতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
শ্রম দপ্তরের সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে পাহাড়ের ৭টি, আলিপুরদুয়ার জেলার ৭টি, জলপাইগুড়ি জেলার ৬টি বাগান বন্ধ। পাহাড়ের বন্ধ থাকা বাগানগুলো হল, কার্সিয়াংয়ের অম্বুটিয়া ও পানিঘাটা, দার্জিলিংয়ের মুন্ডো কোঠি, রংমুক-সিডার, ধোতরে, চংটং এবং নাগেরি। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর কিছুদিন আগে খুলেছে পেশক ও পান্ডাম।
গত অক্টোবর থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে আলিপুরদুয়ারের দলমোর, দলসিংপাড়া, রায়মাটাং ও কালচিনি। সরকারিভাবে বন্ধ থাকলেও কাঁচা পাতা বিক্রি করে কোনওরকমে চলছে রামঝোরা, ঢেকলাপাড়া। পাশাপাশি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ হয়ে রয়েছে ওই জেলারই লঙ্কাপাড়া চা বাগান।
জলপাইগুড়ি জেলায় বন্ধ থাকা বাগানের তালিকায় রয়েছে সাইলি, সোনালি, বামনডাঙ্গা-টন্ডু ও রায়পুর চা বাগান। ছোট চা বাগানের মধ্যে বন্ধ রয়েছে তালমা। খাতায়-কলমে বন্ধ সামসিং চা বাগানও। এই বাগানটি অবশ্য গত ফেব্রুয়ারি থেকে এক মালিকের হাত ধরে চলছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে পুরোনো মালিকের পাওনাগন্ডা শ্রমিকরা পাননি বলে অভিযোগ।
চা বাগানের ভোটই আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং লোকসভা আসনে প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণে অন্যতম ফ্যাক্টর। বন্ধ বাগান যে ভোট বাজারে নিজেদের অ্যাজেন্ডা বিপণনে বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তা অস্বীকার করছে না কোনও দলই। তবে এই ইস্যুতে যথারীতি তারা একে ওপরকে দুষতেই ব্যস্ত।
বিজেপির আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের প্রার্থী মনোজ টিগ্গা বলছেন, ‘চা শিল্পের উন্নয়নমূলক দিকটি কেন্দ্রের আওতাধীন। তবে শ্রমিক সংক্রান্ত বিষয় ও আইনি দিক রাজ্য সরকারের হাতে। বন্ধ বাগান খোলানোর দায়িত্ব রাজ্যেরই। ওরা যদি সঠিক ভূমিকা পালন করত, তবে এতগুলো বাগান বন্ধ হয়ে থাকত না।’
পালটা তৃণমূল কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী প্রকাশ চিকবড়াইকের মন্তব্য, ‘মনোজ টিগ্গা একটাও চা বাগান পরিদর্শনে যান কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বহু বন্ধ বাগান রাজ্যের উদ্যোগে খুলেছে। একটা বাগানও যাতে বন্ধ না থাকে, সেকারণে চা নিয়ে গঠিত মন্ত্রীগোষ্ঠী কাজ অনেকটা এগিয়ে রেখেছে। বন্ধ বাগান ইস্যুতে তৈরি করা হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিওর (এসওপি)। ভোটের পর সবকিছু প্রকাশ্যে আসবে।’
এদিকে, আলিপুরদুয়ার জেলার কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা মণিকুমার দার্নাল অবশ্য দুই ফুলকেই বিঁধেছেন। তিনি বললেন, ‘বাগানগুলো কেন রুগ্ন ও বন্ধ হচ্ছে, তা নিয়ে আগাম চিন্তাভাবনা করে পদক্ষেপের পরিকল্পনা রাজ্য বা কেন্দ্রের নেই।’ আবার সিপিএমের উত্তরবঙ্গের অন্যতম শীর্ষ নেতা জিয়াউল আলমের দাবি, ‘২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি এবং সেইসঙ্গে ২০১১ সালে এখানে তৃণমূলের সরকার আসার পর চা শিল্পে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়।’
জিয়াউলের অভিযোগ, বর্তমান রাজ্য সরকার চায় না, কোনও বাগান খোলা থাকুক। যে কারণে তারা ফ্রি হোল্ড জমি নীতি নিয়েছে। উদ্দেশ্য কর্পোরেটদের হাতে বাগানের জমি তুলে দেওয়া। এবারের ভোটে শ্রমিকরা সবকিছুর মোক্ষম জবাব দেবে।