বর্ধমানঃ মণিপুরে গণধর্ষণের পর দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় ঘোরানোর ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। বিজেপি শাসিত মণিপুর রাজ্যে এমন ঘটনায় নিন্দার বন্যা বইছে দেশজুড়ে। আর তা দেখেই বিজেপি বিরোধীতায় পথে নেমে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের কালনার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাস। বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা মণিপুরের পৈশাচিক ঘটনার বিষয়টি পোস্টার আকারে লিখে তা সাইকেলে লাগিয়ে পৌছে যাচ্ছেন বিভিন্ন আদিবাসী মহল্লায়। উদ্দেশ্য একটাই, লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে বিজেপি বিরোধী জনমত তীব্র করা। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব প্রভাত দাসের এই একাকি প্রচারকে বিশেষ আমল দিতে চাইছেন না।
কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাসের বাড়ি কালনা ১ ব্লকের সিমলন গ্রামে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭২ ছুঁয়েছে। তাঁদের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক প্রভাত বাবু। তাঁর বাবা তারাপদ দাস কংগ্রেস পার্টি করতেন। প্রভাত বাবু বলেন, ‘বাবার হাত ধরে স্কুল জীবন থেকেই তিনি কংগ্রেস পার্টির মিটিং মিছিলে যেতেন। সেই থেকেই কংগ্রেস পার্টির প্রতি তাঁর শ্র্দ্ধা ও ভালবাসা তৈরি হয়। সিপিএমের লোকজন মেরে তাঁর ডান পা ভেঙে দিয়েছিল। সেকারণে বেশি হাঁটতে পারেন না। তবুও তাঁকে কেউ কংগ্রেস পার্টি করা বন্ধ করাতে পারে নি। বাহাত্তর বছর বয়সে পৌঁছে গিয়েও এখন কংগ্রেস পার্টিকেই তিনি আঁকড়ে ধরে আছেন। আমৃত্যু তাই থাকবেন। বায়রন বিশ্বাসের মত কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার কথা কল্পনাও করতে পারেন না বলে জানান প্রভাত দাস। তাঁর সংকল্প একটাই, কংগ্রেস পার্টির ঝাণ্ডা কাঁধে নিয়ে আজীবন দেশ এবং দেশের তপশিলী জাতি ও উপজাতি পরিবার সহ কৃষকদের স্বার্থে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
বয়স বাহাত্তর হলেও ভাঙা পায়ে সাইকেল চালিয়ে কালনা থেকে কার্শিয়াং, হাজার কিমি পথ ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রায় অংশ নিয়ে নিয়েছিলেন কট্টর কংগ্রেসী প্রভাত বাবু। কিছুদিন আগে তিনি একাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট লুট করে পঞ্চায়েত ভোটে ’গণতন্ত্র’ কে হত্যা করার অভিযোগ এনে স্বোচ্চার হয়েছিলেন। আর এবার তিনি মণিপুর কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেস দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন।
ভয় ভীতির তোয়াক্কা না করে কংগ্রেস নেতা প্রভাত দাস তাঁর সাইকেলের সামনে হাতে লেখা একটি পোস্টার লাগিয়েছেন। তাতে লেখা রয়েছে,“ডবল ইঞ্জিন বিজেপির মণিপুরে ’গণতন্ত্র’ অন্ধকারে। মণিপুরে আদিবাসী মহিলাদেরকে ’নগ্ন’ করে ’গণধর্ষণ’ – ছিঃ প্রধানমন্ত্রী ছিঃ”। এমন পোস্টার লাগানো সাইকেলে চেপেই কালনা ১ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে তিনি পৌছে যাচ্ছেন। সেইসব গ্রামের আদিবাসী ও সাধারণ গৃহস্থ পরিবারের কাছে তিনি মণিপুরে মহিলাদের উপরে হওয়া পৈশাচিক অত্যাচারের কথা তুলে ধরে বিজেপির বিরুদ্ধে বিষোদগার উগরে দিচ্ছেন।
কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে সরাতে ইতিমধ্যেই এককাট্টা হয়েছে কংগ্রেস, সিপিএম ও তৃণমূল কংগ্রেস সহ ২৬টি দল। সেই দলগুলি মিলে বিজেপি সহ এনডিএ বিরোধীতায় তৈরি করেছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ’ জোট। শক্তিশালী বিরোধী জোট ছাড়া বিজেপিকে যে কেন্দ্র থেকে হঠানো সম্ভব নয়, সেটা কোন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরই আর বুঝতে বাকি নেই। সেটা জেনেও প্রভাত বাবু কারুর জন্য অপেক্ষায় না থেকে একাই ’মণিপুর ইশুকে’ সামনে রেখে বিজেপি বিরোধী জনমত এককাট্টা করতে ময়দানে নেমে পড়েছেন।
কিন্তু, একা আপনি ময়দানে নামায় আখেরে কি কংগ্রস দলের কিছু লাভ হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রভাত বাবুর সাফ জবাব, “মণিপুরের ঘটনা গোটা দেশবাসীকে দেখিয়েছে বিজেপির ’ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের আসল স্বরুপ। মণিপুরের ঘটনায় গোট বিশ্বে ভারতের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। দেশটাকে ধনকুবেরদের কাছে বিক্রি করে দিছে মোদি সরকার“। প্রভাত বাবুর যুক্তি, ‘এইসব বিষয়গুলি গ্রামের সাধারণ মানুষকে জানানো জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই আর ঘরে বসে থাকতে না পেরে একজন কংগ্রেস কর্মী হিসাবে তিনি একাই ময়দানে নেমে পড়েছেন। পরে দলের পক্ষ থেকে যেমন নির্দেশ পাবেন সেই ভাবেই পথে নামবেন বলে প্রভাত দাস মন্তব্য করেন’।
বর্ধমানের প্রদেশ কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার অবশ্য প্রভাত দাসের এহেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা জেনে খুশি। তিনি বলেন, “প্রভাত বাবু শুধুমাত্র একনিষ্ট কংগ্রেস কর্মীই নন, উনি কংগ্রেস দলের সম্পদ। প্রভাতবাবু একাই একশো। সাইকেলে ঘুরে ঘুরে উনি মণিপুর কাণ্ড নিয়ে কালনার মানুষজনকে সঠিক কথাই বলছেন। মণিপুরে মহিলাদের সঙ্গে যে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেছে, সেটা কোন সভ্য দেশে হতে পারে না।
২৪ শের লোকসভা ভোটে বড় ’ইস্যু’ হবে এই মণিপুর কাণ্ড। এখন না হয় এই ’ইস্যু’ নিয়ে প্রভাত বাবু নিজের মত করে পথে নেমেছেন। আগামী দিনে গোটা কংগ্রেস দল মণিপুর ইস্যুতে পথে নামবে’। যদিও জেলা বিজেপির মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন, মণিপুরের ঘটনা নিয়ে প্রাধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কড়া বার্তা দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িতদের একের পর এক গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অভিযুক্তরা কেউ ছাড় পাবে না। তার পরেও শুধুমাত্র অস্তিত্বের জানান দিতে কংগ্রেস এইসব নিয়ে কথা বলছে। তাও আবার একা এক বৃদ্ধ কে পথে নামিয়েছে। আসলে দিদিমণির সঙ্গে সেটিং করে নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস ও ভোট লুটের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই কংগ্রেস এখন মণিপুর নিয়ে মেতেছে। তবে ওরা যাই করুক, ২৪ শেও মোদির প্রতি আস্থা রাখবেন দেশের জনগণ।