উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ কথা দিয়ে কথা রাখল সিপিএম। ভোট মিটতেই চাঁদা তুলে সহায় সম্বলহীন এক বৃদ্ধার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ করিয়ে দিলেন সিপিএম কর্মীরা। এই ঘটনা জলপাইগুড়ির তিস্তাপারের। রবিবার সন্ধ্যায় বৃদ্ধার ঘরে হ্যারিকেনের আলোর বদলে জ্বলল টিউব লাইট। ফলে যারপরনাই খুশি অশীতিপর বৃদ্ধা।
ভোট পরবর্তী হিংসার মধ্যে এবার উল্টো ছবি। নজির গড়লেন সিপিএম কর্মীরা। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকান্ত নগর কলোনির বাসিন্দা সখিনা খাতুন। এই অশীতিপর বৃদ্ধার বয়স ৭৫ বছর। সহায়সম্বলহীন এই বৃদ্ধার ঘরে সামান্য কেরোসিনের কুপি জ্বালানোর সামর্থ্যটুকু ছিল না। তাই সন্ধ্যা হতে না হতেই বৃদ্ধা ঘরে ঢুকে যেতেন। আবার সকাল হলে ঘরের বাইরে আসতেন। তাঁর কপালে জোটেনি বার্ধক্য ভাতাও। বয়সের কারণে পাননা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এভাবেই কাটছিলো বছরের পর বছর। অভিযোগ, গত তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সব দেখেও কিছুই করেনি। এমনকী বৃদ্ধা ভাতার ব্যাবস্থাও পর্যন্ত করে দেননি।
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রচারের সময় বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের। সেইসময় তাঁরা বৃদ্ধাকে কথা দিয়েছিলেন, ‘এবারে ভোটে জিতি বা হারি আমরা তোমার ঘরে বাতি জ্বালিয়েই ছাড়ব’। ভোট পর্ব মিটেছে। এই গ্রামে জয়ী হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী গোঁসাই সরকার। যেমনি প্রতিশ্রুতি তেমনি কাজ। শুরু হল বৃদ্ধার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ। সিপিএমকর্মীরা নিজেরাই চাঁদা তুলে অর্থ সংগ্রহ করে যোগাযোগ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ছুটলেন নিকটবর্তী বিদ্যুৎ নিগমের অফিসে। বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরাও তৎপরতার সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ করে দেন রবিবার বিকেলে।
নব নির্বাচিত সিপিএম পঞ্চায়েত সদস্য গোঁসাই সরকার বলেন, “প্রচারে বের হয়েই নজরে পরে বৃদ্ধার বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। সেই সময় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ভোটে আমরা জিতি বা হারি ভোটের পর তাঁর বাড়িতে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করে দেব। আজ সেই প্রতিশ্রুতি পালন করা হল।”
বৃদ্ধা সখিনা খাতুন বলেন, “বিগত তৃণমূলের পঞ্চায়েত আমার এই অসহায় অবস্থা জেনেও কিছু করেনি। বৃদ্ধ ভাতার জন্য দুবার আবেদন করেছিলাম কিন্তু কিছুই পাইনি। শেষ বয়সে সিপিএম উদ্যোগে বাড়িতে আলো পেলাম।”
সিপিএম নেতা পীযুষ মিশ্র বলেন, “এতদিন আমরা সুযোগ পাইনি কাজ করার। এখন এলাকার মানুষ সুযোগ করে দিয়েছে। এই কারণে প্রথম কাজ হল আমাদের গ্রামের যেসব বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই এরকম সব বাড়িতে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা। এছাড়া যেই সকল বাড়িতে খাদ্য সংকট রয়েছে তাঁদের সকলের সমস্যা মেটানো। আমরা এই বৃদ্ধার শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগ করিয়ে দিয়ে থেমে থাকব না। আমরাই চাঁদা তুলে মাসের বিল মেটাবো। আজ থেকে থেকে এই উদ্যোগ শুরু হল।”
যদিও এমন ঘটনায় সিপিএমকে কৃতিত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুভাষ চন্দ বলেন, ‘বৃদ্ধা কোনও দিনই বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আসেননি তাঁদের কাছে। আসলে অনেক আগেই আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ করিয়ে দিতাম। সিপিএম প্রচারে আসতে এসব করছে’।