অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: জীবনে চলার গতিপথ কখন যে কোন দিকে মোড় নেবে, তা কেউই জানে না। ঠিক তেমনই জানা ছিল না ৬৮ বছর বয়সি মহেশ্বরী পাসোয়ানের৷ বয়সের ভারে জরাজীর্ণ শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ। ওষুধের টাকা জোগাড় করতে এই শরীর নিয়েও তিনি মাটির উনুন বানিয়ে চলছেন। এখন সেভাবে উনুনের চাহিদা না থাকলেও সামনেই চৈতিছট। সেই আশাতেই দিন-রাত পরিশ্রম করছেন মহেশ্বরী।
জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) শহর সংলগ্ন খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পান্ডাপাড়া কালীবাড়ির বাইপাস রোডের ধারে বসবাস পাসোয়ান পরিবারের৷ বাড়িতে ঢুকলেই দরিদ্রতার ছাপ চোখে পড়ে। টিনের ছাউনি দেওয়া একটি ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়ি। ওই বাড়িরই একচিলতে ঘরে বাস করেন মহেশ্বরী। তাঁর আর্থিক সম্বল বলতে শুধু উনুন বিক্রির কিছু অর্থ। সঙ্গে বৃদ্ধ ভাতার ১০০০ টাকা। স্বামী হারানোর শোক ভুলতে না ভুলতেই মহেশ্বরী হারিয়েছেন ছোট ছেলে ও এক বৌমাকে। কথা বলতে গিয়ে তাঁর দু’চোখ দিয়ে জল ঝরে পড়ে। বর্তমানে তিন ছেলের অবস্থাও দিন আনি দিন খাই।
উনুন বানানোর মাটি মাখতে মাখতে মহেশ্বরী বলেন, ‘গ্যাসের যুগে আর মাটির উনুনের চাহিদা নেই৷ অসুস্থতার কারণে প্রচুর ওষুধ খেতে হয়। কী আর করার? ভাঙা হাত নিয়েই উনুন বানাই। সেজো ছেলে সপ্তাহে দু’একদিন ভ্যানে করে নিয়ে বেঁচতে বের হয়। যা পয়সা আসে তাই দিয়েই কোনওরকমে মাটি কেনা থেকে ওষুধ কেনা হয়।’ সেজো ছেলে রবীন্দ্র পাসোয়ান একটি মিলে কাজ করেন। তাঁর কথায়, ‘মায়ের জন্যই বের হতে হয়। প্রতি পিস উনুন ৭০-৮০ টাকা করে বিক্রি করি। এর মধ্যে মায়ের ওষুধ সহ এক ট্রলি এঁটেল মাটি কিনতেই প্রায় ১২০০ টাকা লেগে যায়। তীব্র গরমে যে পরিমাণ পরিশ্রম হয় তাতে লাভের লাভ কিছুই থাকে না। কোনও কোনওদিন ৩-৪টে বিক্রি হয়৷ আবার কোনওদিন একটিও না।’
মহেশ্বরীর শরীরে বয়সের ছাপ। এই অবস্থাতেও কালোমাটির সঙ্গে শুকনো ঘাস ভালো করে মিশিয়ে দিনে প্রায় ১০-১২টি উনুন বানান। আর বুকে পাথর চাপা দিয়ে গুনতে থাকেন শেষ বিদায়ের দিন।