প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার নেপথ্যে গভীর চক্রান্ত, ‘অন্তর্ঘাত’এর অভিযোগ এনেছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। বালাসোর কাণ্ডের পরপরই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, এটা কোনও নিছক দুর্ঘটনা নয়। নেপথ্যে রয়েছে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। দীনেশের এই দাবি ঘিরে কার্যত উত্তপ্ত রাজনৈতিক মহল৷ কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, দেশের প্রধান বিরোধী দল দুটির শীর্ষ প্রতিনিধিরা এ নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের নেকনজরে থাকার জন্যই এহেন অবাস্তব যুক্তি খাড়া করছেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ। এমনকি অনৈতিকভাবে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন তিনি, উঠেছে এমন অভিযোগও।
গতকালই করমণ্ডল এক্সপ্রেস নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছিলেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দীনেশ ত্রিবেদী। তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দীনেশ দাবি করেন, এই দুর্ঘটনা জেনে বুঝে ঘটানো হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে অন্তর্ঘাত। একটি সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দীনেশ বলেন, ‘রেলে ইন্টারলকিং সিস্টেম সম্পর্কে যা বুঝি তাতে এটা স্পষ্ট যে এই দুর্ঘটনা অন্তর্ঘাতের কারণে হয়েছে। এর পেছনে একটা বড় কারচুপি রয়েছে। তার জেরেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস মেইন লাইন থেকে লুপ লাইনে চলে গিয়েছিল।’ তাঁর দাবি, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত যে এই সংঘর্ষের পেছনে অন্তর্ঘাত রয়েছে। এটা কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা নয়। দীনেশ ত্রিবেদী অভিযোগ করেন, ‘যদি কোনও ইন্টারলকিং সিস্টেম কাজ না করে তবে অন্য সিস্টেম কাজ করতে শুরু করে। এটাকে বলে ফেইল সেফ। যদি ফেইল সেফ কার্যকরি হয়ে যায় তবে ওই লাইনে টানা লাল সিগন্যাল হয়ে যায়। আর যদি এই লাইনে সিগন্যালের গাফিলতি থাকত তাহলে লাইন ব্লক হয়ে যেত।’
এই সূত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একহাত নিতে ছাড়েননি দীনেশ। ওডিশা গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বালাসোর রেল দুর্ঘটনা নিয়ে তোপ দেগেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। পালটা সমালোচনায় মমতাকে নিশানা করেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দীনেশ ত্রিবেদী৷ তিনি বলেন, ‘কালো চশমা পড়ে থাকলে সবকিছু কালোই দেখাবে।’ প্রাক্তন রেলমন্ত্রী এই নিয়ে রাজনীতি না করার অনুরোধ করেছেন মমতাকে। এই প্রসঙ্গে জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার কথা উত্থাপন করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তখন রেলমন্ত্রী, যিনি সিবিআইকে এর তদন্তভার দিয়েছিলেন। সেসময় সিপিআইএমকে রাজনীতি করতে বারণ করেছিলেন। আর এখন তিনি নিজেই এই কাজ করছেন।’
দীনেশের এই অভিযোগের পরই ময়দানে নামে কংগ্রেস। ইউপিএ জমানার রেলমন্ত্রীকে তোপ দাগেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। এই নিয়ে রমেশ বলেন, ‘৭ মাস দায়িত্বে থাকা এক প্রাক্তন রেলমন্ত্রী ভুল ও মিথ্যা তত্ত্ব বানাচ্ছেন ওডিশার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে। বর্তমানে বিজেপিতে আছেন তিনি এবং সে দলের শীর্ষ নেতৃত্বর মন জয় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’ এরই পাশাপাশি দীনেশের দিল্লির বাসস্থান নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে জয়রাম রমেশের দাবি, দিল্লির অভিজাত ও বর্ধিঞ্চু অঞ্চল লুটিয়েন জোনে জায়গায় তাঁর যে বাংলো আছে, সেটা ধরে রাখতেই এই কাজ করছেন তিনি। ১৮ মাস আগেই তাঁর সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাও সেই বাংলোতেই আছেন দুর্ভাগ্যজনক।’ সরাসরি দীনেশের নাম না নিয়েই চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানান তিনি।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র ও নেতা সাকেত গোখলে এই প্রসঙ্গে টুইট করে জয়রামকে সমর্থন করে জানান, ‘জয়রামের যুক্তি নির্ভুল।’ দীনেশ ত্রিবেদীর নাম না নিয়েই বলেন, ‘প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে ল্যুটিয়েনে থাকার জায়গা দিতে অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছে বিজেপি। প্রাক্তন রেলমন্ত্রীকে বহাল করা হয়েছে, সংসদের ডিজিটাল লাইব্রেরি বিষয়ক বিশেষ কমিটির সদস্য করার জন্য। মজার বিষয় এই কমিটিতে সদস্য সংখ্যা মাত্র একজন, তা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী স্বয়ং।’ সাকেত এও বলেন, সংশ্লিষ্ট বাসভবনগুলি দেশের জনপ্রতিনিধিদের জন্য সংরক্ষিত। আদতে তা হচ্ছে না। সাকেতের দাবি, রাজ্যসভা ও লোকসভা সচিবালয় সূত্রে তথ্যের অধিকার আইন প্রয়োগ করে জানা গিয়েছে দেশের সাংসদদের জন্য ধার্য এই বাংলোগুলি বিজেপি ইচ্ছামতো ব্যবহার করে, এমনকি দলের কর্মী-সমর্থকরা বেনামে বা সাংসদদের পরিচিত হিসেবে দিনের পর দিন লুটিয়েনে বাংলো দখল করে রেখেছেন। দীনেশ সেই তালিকাতেই নব্য সংযোজন।