উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ “কোহিনূর” হিরেকে দেশে ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার। নয়াদিল্লি এবং লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এই লক্ষ্যে তুমুল কূটনৈতিক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এমনই দাবি করেছে একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে। শুধু কোহিনূর নয়, বিলেতের নানা সংগ্রহশালায় থাকা একাধিক বহুমূল্য ধনদৌলতকে সরকারিভাবে এদেশে ফিরিয়ে আনতে চায় ভারত। এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগী হয়েছে নয়াদিল্লি।
কোহ-ঈ-নূর, বা লোকমুখে “কোহিনূর”! নামের অর্থ, ‘আলোর পাহাড়!’ শোনা যায়, গোদাবরী অববাহিকায় কাকাটীয় বংশের রাজত্বকালে গোলকোণ্ডা খনিতে ১৮৬ ক্যারেটের এই অনির্বচনীয় রত্নটিকে পাওয়া যায়। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা কোহিনূর হিরেটিকে নিয়ে যায় লন্ডনে। গোদাবরী, শতদ্রু, বিপাশা, ঝিলম ছাড়িয়ে কোহিনূরের ঠিকানা হয়েছে টেমসের তীরে ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’! ব্রিটিশ রাজপরিবারের মিউজিয়ামে। সেখানে এর চাইতেও ঢের বড় সাইজের হিরে আছে! কিন্তু কোহিনূরের ইতিহাসের কাছে ওরকম কয়েকশো হিরের দ্যুতি ম্লান হয়ে যায়। এবার সেই কোহিনূরকে ফিরিয়ে আনতে আরও জোরদার দাবি পেশ করতে চলেছে ভারত।
একটি ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, নয়াদিল্লি এবং লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এই লক্ষ্যে তুমুল কূটনৈতিক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শুধু কোহিনূর নয়, বিলেতের নানা সংগ্রহশালায় থাকা একাধিক বহুমূল্য ধনদৌলতকে সরকারিভাবে এদেশে ফিরিয়ে আনতে চায় ভারত। এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উদ্যোগী হয়েছে নয়াদিল্লি। দুদেশের মধ্যে তৎপরতা শুরু হতেই বিতর্ক এড়াতে এবারের অভিষেকে কোহিনূরকে মুকুটে রাখেননি নব অভিষিক্ত রানি ক্যামিলা।
জানা গিয়েছে, বহুদিন অবধি ভারতই ছিল বিশ্বের একমাত্র হিরে-উৎপাদক দেশ। ১৭২৫ সালে গোলকোণ্ডার খনিতে বহু পরিশ্রমের পরে মিলত হিরে। দাক্ষিণাত্যের রাজারাই ছিলেন এর প্রথম সমঝদার। কোহিনূরের উৎপত্তিও সেখানেই। তবে শুরু থেকেই যেন এর সঙ্গে মিশে ছিল অভিশাপ। যে এর অধিকারী হয়েছে, তারই কপালে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।
কোহিনূরের ইতিহাসে মিলে গিয়েছে দক্ষিণ ভারত থেকে গোটা মধ্য এশিয়া, পরে ইউরোপ! দাক্ষিণাত্য থেকে দিল্লির সুলতানি, সেখান থেকে পারস্যের নাদির শাহের সেনাবাহিনী হয়ে মধ্য এশিয়া ঘুরে এসে পৌঁছয় আফগান নৃপতি আহম্মদ শাহ আবদালির হাতে। তাঁর বংশধরদের থেকে কোহিনূরের মালিকানা পান লাহোরের মহারাজা পাঞ্জাব কেশরী রঞ্জিত সিংহের হাতে। রঞ্জিত সিং ব্রিটিশদের ক্ষমতাকে বুঝতেন, অত্যন্ত বুদ্ধিমান কূটনীতির দ্বারা তিনি ব্রিটিশদের সঙ্গে শান্তি রেখে চলতেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর পাঞ্জাব জুড়ে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়। শুরু হয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ। তাতে শেষ অবধি হার মানতে হয় শিখদের। লাহোরের চুক্তির শর্ত মেনে কোহিনূর চলে যায় ব্রিটিশরাজের কাছে। অধিকারী হন মহারানি ভিক্টোরিয়া।
পরবর্তীতে ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বহু অনুরোধেও ব্রিটিশ সরকারের থেকে কোহিনূর ফেরানো যায়নি। শুধু ভারত সরকার ছাড়াও ভারতের একাধিক রাজপরিবার, বেসরকারি সংগ্রাহক, রাজবংশের উত্তরাধিকারী, পাকিস্তান সরকার এমনকি তালিবান অবধি কোহিনূরের দাবি নিয়ে দরবার করেছে লন্ডনে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। আজও পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সংগ্রহশালা ব্রিটিশ মিউজিয়াম জুড়ে রয়েছে একাধিক নামী ধনরত্ন, যা বিভিন্ন দেশ থেকে ‘লুঠ’ করে আনা। কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর এই বিখ্যাত মিউজিয়ামকে ‘চোরবাজার’ বলেও কটাক্ষ করেছেন।
কর্নাটকের নির্বাচনে বিজেপির হারের পর দেশজোড়া নতুন জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলতে বিজেপি সরকার কোহিনূরের শরণাপন্ন হতে পারে, এমনটাও ভাবছেন অনেকে। বস্তুত, কোহিনূর ফেরাতে পারলে নরেন্দ্র মোদি সেটিকে তাঁর সাফল্য বলেই প্রচার চালাবেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে সবদিক দেখেশুনেই কোমর বেঁধে নামছে বিজেপি শাসিত কেন্দ্র।