সুভাষ বর্মন, ফালাকাটা: ফালাকাটা-আলিপুরদুয়ার সড়কের সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডের উত্তরদিকে রাস্তা ধরে এক কিমি যেতেই চোখে পড়ল সব বাড়ির সামনে বালি, পাথরের স্তূপ। কেন? রাস্তার পাশেই ছোট্ট মুদির দোকান তরুণ রবিন বড়াইকের। সেখানেই বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের মধ্যে জোর চর্চা। রবিন নাকি ডিমডিমার এক ডাম্পার বালি, পাথর কিনেছেন ৪০ হাজার টাকায়। সেগুলি শেষ। পরে আরও সাড়ে চার হাজার টাকায় দুই গাড়ি বালি, পাথর লেগেছে। পাট্টার পর আবাসের এক লক্ষ ২০ হাজারের মধ্যে সরকার প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে। এখন ভোটের সময়। বাকি টাকা ঢুকবে কি না সংশয়। তাই বর্ষার কথা ভেবে রবিনের মতো অনেকেই বিড়ম্বনায়।
রবিন বাকিদের বলছিলেন, ‘ঘরের কাজে হাত দিয়ে বুঝলাম ওই টাকায় কোনওভাবে তা শেষ করা যাবে না।’ সেখান থেকে ওই পাকা রাস্তা ধরে আরও কিছুটা উত্তরে যেতেই বাগানের ফ্যাক্টরি। আশপাশের বাড়িগুলিতেও কাজের ব্যস্ততা। ওই পাকা রাস্তার এক মোড় থেকে পূর্ব-পশ্চিম দিকে একটি মেঠো পথ চলে গিয়েছে চাড়োয়া লাইনে। তবে ভোট ঘোষণার আগেই এই পাঁচ কিমি রাস্তার কাজের শিলান্যাস হয়েছে। চাড়োয়া লাইনে একটি বাড়িতে এখনও ঘরের কাজ শুরু হয়নি। নেই বালি, পাথরের স্তূপও। প্রবীণ পঞ্চায়েত ওরাওঁয়ের কাছে জানতে চাইতেই জবাব, ‘কেউ কেউ এখনও ঘরের টাকা পায়নি। তবে আমরা পেয়েছি।’
গৃহবধূ সুকুরমণি ওরাওঁ বললেন, ‘পাট্টা পেয়েছি। কিন্তু আমরা এখনও ঘরের প্রথম কিস্তির টাকা পাইনি।’ মাঝবয়সি গাদে ওরাওঁয়ের বক্তব্য, ‘বালি, পাথরের যে দাম, ওই টাকায় ঘরের কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। পরে হয়তো ঋণ করতে হবে, না হলে জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করতে হবে।’ বাগানের আরেক মোড়ে দেখা তরুণ সুরজ গোয়ালার সঙ্গে। ঘরের সমস্যার পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘বাগানের নিকাশিনালাগুলি ভালো নয়। বর্ষায় নালা প্লাবিত হয়।’ এগিয়ে এলেন বাগানের চৌকিদার সাগর সাহু। তাঁর ক্ষোভ পানীয় জল নিয়ে। বললেন, ‘রিজার্ভার তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখনও বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছায়নি। নলকূপের জল খেতে হয়।’
প্রায় দু’মাস আগে ফালাকাটার কাদম্বিনী চা বাগানের ১১৫৫ জন শ্রমিককে পাট্টা দেওয়া হয়। তারপর শ্রমিকদের অধিকাংশই অবশ্য ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন। নথিপত্র ত্রুটির কারণে হয়তো কেউ কেউ পাননি। তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক অশোক সাহার কথায়, ‘ব্যাংকের নথিপত্র ত্রুটির কারণে সেটা হতে পারে। তবে প্রথম কিস্তির টাকায় ঘরের কাজ এগোলেই বাকি টাকা শ্রমিকরা পেয়ে যাবেন৷’ কিন্তু বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মিঠু দাসের বক্তব্য, ‘চা শ্রমিকদের ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। ওই টাকায় পাকা ঘর কোনওভাবেই করা সম্ভব নয়। তাই শ্রমিকরা বিড়ম্বনায়।’