অভিজিৎ ঘোষ, আলিপুরদুয়ার: শীত আসতেই বক্সা (Buxa) পাহাড়ে শুরু হয়েছে লোসার (Losar) উৎসব। মূলত বক্সার ডুকপা (Dukpa) জনজাতির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের (Buddhist) মানুষ এই উৎসবে শামিল হন। প্রতিবছরই ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের মধ্যে বক্সার বিভিন্ন জায়গায় এই উৎসব হয়ে। ডিসেম্বর মাসে যেমন বক্সার এক পাহাড়ি গ্রাম আদমায় এই উৎসব হয়ে গিয়েছে। তবে বক্সা পাহাড়ে সব থেকে বড় আকারে লোসার উৎসব কিন্তু পালন হয় লেপচাখায় (Lepchakha)। এবছর ওখানে এই উৎসব চলবে ৭ দিন। আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে বক্সায় শুরু হচ্ছে লোসার উৎসব। উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে।
এবিষয়ে লেপচাখার স্থানীয় বাসিন্দা পিনছো ডুকপা বলেন, ‘লোসারকে আমরা সব থেকে বড় উৎসব হিসেবে মনে করি। গ্রামের সবাই এই উৎসবে শামিল হয়। বক্সার অন্য গ্রাম থেকেও আমাদের আত্মীয়স্বজনরা এসে এই উৎসবে শামিল হন।’
লোসার উৎসবে শুরু হয় সকাল থেকেই। সকালে প্রার্থনা করে উৎসব শুরু হয়। এরপর সারাদিন চলে তিরন্দাজি প্রতিযোগিতা। দুপুরে গ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে ছোর্টেনে গ্রামের সব পুরুষরা একসঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়া করেন। গ্রামের সব বাড়িতে আলাদা রান্না হলেও সবাই একসঙ্গে বসেই খাওয়াদাওয়া করেন। এক জনের বাড়ির রান্না অন্য জনের সঙ্গেও ভাগাভাগি করে খাওয়া হয়।
খাওয়াদাওয়ার পর বিকেল পর্যন্ত আবার চলে তিরন্দাজি (Archery)। এরপর চা বিরতির পর সন্ধ্যায় প্রার্থনায় শামিল হন গ্রামের সবাই। সন্ধ্যায় আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। প্রতিদিনের অনুষ্ঠানে গ্রামের সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপস্থিত হতে হয়। সময়মতো না আসলে আবার জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা জমা হয় বৌদ্ধ মন্দিরে। সেটা বিভিন্ন কাজে খরচ করা হয়।
কয়েক বছর আগেও এই লোসার দু থেকে তিনদিন চললেও সময়ে সময়ে সেটার দিন বাড়ানো হচ্ছে। উৎসব বড়ভাবে করার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। একদিকে নিজেদের সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য যেমন উৎসব পালন করা হচ্ছে আবার বক্সার পাহাড়ে পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠছে এই লোসার। অনেক পর্যটকও নাকি এই উৎসব দেখতে শামিল হবেন। বক্স পাহাড়ে লেপচাখা পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন সময় যখন পর্যটকরা ওখানে ঘুরতে যান তখন টুরিস্ট গাইডরা লোসার উৎসবের কথা তুলে ধরেন পর্যটকদের সামনে। এই রকম উৎসবে অনেকেই আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এবছরও এই উৎসব দেখতে অনেকে আসবে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। লেপচাখার পর্যটন ব্যবসায়ী সোহম চক্রবর্তী এই বিষয়ে বলেন, ‘এই সময় তো এমনিতেই পর্যটকদের ভিড় রয়েছে। অনেক পর্যটক আবার খোঁজ নিচ্ছেন লোসার উৎসব সম্পর্কেও। আশা করছি অনেকেই আগ্রহ দেখিয়ে আসবেন।’
লেপচাখার যে বাসিন্দারা কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন তাঁরাও গ্রামে ফিরবেন উৎসবে। ওই গ্রামের এক যুবক ছেরিং দোজি ডুকপার কথায়, ‘কাজ থাকায় গত বছরও লোসারে গ্রামে যেতে পারিনি। এবার দুদিনের জন্য যাব। সবার সঙ্গে দেখা হবে। আনন্দ হবে।’