ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি : যে দিকে চোখ যায় চারিদিকে ধ্বংসের চিহ্নটা প্রকট। শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ফুলবাড়ি ব্যারেজে মহানন্দায় জলস্তর বৃদ্ধির জেরে বিঘার পর বিঘা জমি নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরেই জলের চাপে এই পাড়ভাঙন শুরু হওয়ায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বালির বস্তা দিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও কয়েক বিঘা খতিয়ানভুক্ত জমি জলে চলে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি বাসিন্দাদের আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে। ফাঁসিদেওয়ার বিডিও সঞ্জু গুহ মজুমদার বলেন, ‘নদীর পাড় ভাঙার বিষয়টি আমরা সেচ দপ্তরকে জানিয়েছি।’
গত কয়েকদিনের লাগামছাড়া বৃষ্টির কারণে ফুলবাড়িতে মহানন্দা ব্যারেজ থেকে প্রচুর জল ছাড়া হচ্ছে। আর এর চাপেই মহানন্দার পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। নদীর পাড় বাঁচানোর জন্য আগে বাঁধ দেওয়া থাকলেও সেই বাঁধ জলের তোড়ে এবার ভেঙে গিয়েছে। যার ফলে পাড় সহজেই ভেঙে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। প্রতিদিনই মহানন্দার পাড় ভাঙছে। নদীর পাশ দিয়ে একমাত্র যে রাস্তা দিয়ে ওই এলাকার লালদাসজোত, কালারাম, ডোগরজোত, কালাচাঁদ গ্রামের মানুষ চলাফেরা করেন সেই রাস্তারও অনেকটা ভেঙে গিয়েছে। প্রচুর মানুষের জমি নদীতে চলে যাওয়ায় বাসিন্দাদের আতঙ্ক বাড়ছে। লালদাসজোত এলাকা থেকে মহানন্দা প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বে গিয়ে বাংলাদেশে মিশেছে।
লালদাসজোতের বাসিন্দা হবিবুর রহমান বললেন, ‘নদীর পাড়ে আমার খতিয়ানভুক্ত জমি ছিল। কিন্তু যেভাবে জল ছাড়া হচ্ছে তাতে আমার জমির অনেকটাই নদীর জলের ভেসে গিয়েছে। প্রতি রাতে আমরা জেগে থাকি। আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে।’ নদীর পাশ দিয়ে যে রাস্তা দিয়ে গ্রামে ঢোকা যায়, সেই রাস্তাও জলের তোড়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন কয়েকশো মানুষ যাতায়াত করেন। স্থানীয় কালারাম গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ বর্মন বললেন, ‘এরকম অবস্থা আগে হয়নি। এই রাস্তাটাই যদি ভেসে যায়, তাহলে গ্রামের প্রচুর মানুষ অসুবিধায় পড়বে। এবার বর্ষার শুরুতেই এই অবস্থা। আরও দিন তো পড়ে রয়েছে। কী যে হবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
মহানন্দা নদীতে মাছ ধরতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মাছ ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। রবিবারও তার ব্যতিক্রম দেখা যায়নি। নদীর যে অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে সেই অংশে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা পবিত্র রায় নদীতে জাল পাতছিলেন। তিনি বললেন, ‘গত বছরও নদী এতটা চওড়া ছিল না। কিন্তু এবার নদীর জলে পাড়ের অনেকটাই ভেঙেছে। এভাবে যদি ভাঙন চলে তবে তো পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি নদীগর্ভে চলে যাবে।’ স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার রায় বললেন, ‘আগে এই এলাকায় সেভাবে নদীভাঙন দেখা যায়নি। কিন্তু জলের তোড়ে নদীপাড় এবার অনেকটাই ভেঙেছে। সেচ দপ্তরের অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ ভাঙন রুখতে প্রশাসনের তরফে নদীপাড়ে প্রচুর বালির বস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য আরও অনেক বস্তা তৈরি রাখা হয়েছে।
মহানন্দা নদীর যে অংশের পাড় ভাঙছে সেই অংশটি ফাঁসিদেওয়ার জালাস নিজামতারা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। তবে ভাঙনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে সেখানকার পঞ্চায়েত প্রধান শম্পা দাস মিস্ত্রি জানিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি অরুণ ঘোষ বললেন, ‘নদীভাঙন রোধে আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। সেচ দপ্তরের সঙ্গেও বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জালাসের বিষয়টিও আমি অবশ্যই দেখব।’