কলকাতা: ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অহংকার হয়েছে। দেশের মানুষের উচিত এই অহংকারী সরকারকে হটানো’, মঙ্গলবার নবান্নে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েকে পাশে নিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টি (আপ)-র সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
দিল্লিতে আমলা নিয়োগ এবং বদলির রাশ হাতে রাখতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টকে টপকে অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্র সরকার। যদিও শীর্ষ আদালত সাফ জানিয়েছিল, আমলাদের বদলি থেকে যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দিল্লির নির্বাচিত সরকারের। সেই নির্দেশকে টপকে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র। আমলা-নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি সরকারের সংঘাতের মাঝেই এদিন কলকাতায় আসেন সপার্ষদ কেজরি।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ১৪ মিনিটে কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছোন কেজরিওয়াল, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান, আপ সাংসদ রাঘব চাড্ডা সহ অন্যরা। বিমানবন্দর থেকে আপ নেতারা সোজা পৌঁছে যান নবান্নে। তাঁদের স্বাগত জানান খোদ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নবান্নে তিন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী মহাজোট গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরে আপ নেতাদের পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সেখানে বিজেপি বিরোধী সুরই শোনা গিয়েছে সকলের গলায়।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তৃণমূল নেত্রী। তিনি বলেন, ‘যেসমস্ত রাজ্যে বিরোধীরা ক্ষমতায় রয়েছে সেখানেই বিজেপি সমস্যা তৈরি করছে। তারা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে দিচ্ছে না। বিজেপি বিচার ব্যবস্থা ও সমস্ত এজেন্সিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। বিষয়গুলি নিয়ে আমরা এদিন আলোচনা করেছি।’
সুপ্রিম কোর্টকে টপকে কেন্দ্রের অধ্যাদেশ জারির নিন্দা করেছেন মমতা। এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টকে সম্মান করি। একমাত্র শীর্ষ আদালতই দেশকে বাঁচাতে পারে।’ কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্রকে বুলডোজ করছে বলেও এদিন তোপ দাগেন তৃণমূল নেত্রী।
অন্যদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে মমতাকে বড় বোন বলে সম্বোধন করেন কেজরিওয়াল। পরে তিনি বলেন, ‘বিজেপি গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করেছে।’
কেজরির অভিযোগ, ‘বিজেপি মূলত তিনভাবে বিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত সরকারগুলিকে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করছে। প্রথমত, যেখানে বিজেপি জিততে পারছে না, সেখানে অন্য দলের বিধায়কদের কিনে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে নিজেদের সরকার গঠন করছে। দ্বিতীয়ত, বিরোধী দলের সাংসদ-বিধায়কদের ইডি বা সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে তাঁদের নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে। তৃতীয়ত, আইনের অপব্যবহার করে রাজ্যপালের মাধ্যমে অর্ডিন্যান্স পাশ করে অবিজেপি সরকারগুলিকে কোনও কাজ করতে দিচ্ছে না বিজেপি।’
কেজরির সংযোজন, ‘পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাব, তামিলনাড়ু, তেলঙ্গনায় রাজ্যপালের মাধ্যমে সমস্যা সৃষ্টি করছে বিজেপি। আর দিল্লিতে যেটা হয়েছে সেটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ওই অর্ডিন্যান্স ঠিক নয়।’
এরপরই আপ সুপ্রিমোর তোপ, ‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অহংকার হয়ে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের উচিত এই অহংকারী সরকারকে হটানো।’
এদিনের বৈঠকে বিরোধী পরিচালিত রাজ্যগুলির উল্লেখ করে মমতা ও কেজরি দুজনেই লোকসভা ভোটের আগে মহাজোট গঠনের বার্তাই দিলেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই জোট গঠন হয় কিনা, সেটাই দেখার।