শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: ৩২ দিন আন্দোলন চলার পর বুধবার সন্ধ্যায় তা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করল সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতি।
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের (NBU) প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান আন্দোলন শুরু করেছিলেন সমিতির নেতা, কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকরাও। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির জরুরি বৈঠক হয়। সেখানে অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বিষয়টি কর্মসমিতিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সিএম রবীন্দ্রন সেই কথা জানানোর পর আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন শিক্ষাবন্ধু সমিতির নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ফের কর্মসমিতির বৈঠক ডাকবেন রবীন্দ্রন। ১৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় কর্মসমিতির বৈঠক হয়নি। এবার যাতে তেমন পরিস্থিতি না হয়, তারজন্য পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। আচার্য বা রাজ্যপালের প্রতিনিধি, ডিন সহ ছয়জন প্রতিনিধিকে কর্মসমিতির বৈঠকে উপস্থিত করানোর জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে।
আগের কর্মসমিতির বৈঠকের জন্য অনুমোদন দেয়নি রাজ্য সরকার। ফলে কর্মসমিতির সদস্য হিসাবে থাকা বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষরাও বৈঠকে উপস্থিত হননি। সূত্রের খবর, সেই অধ্যক্ষদের মধ্যে কমপক্ষে দুজনকে বৈঠকে হাজির করানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই আধিকারিক গোপনে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের কথা, ‘সংবাদমাধ্যমে ওই বিষয়ে কোনও কথা বলতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ রয়েছে।’
এদিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন রবীন্দ্রন, স্বপন ও সুরজিৎ। সূত্রের খবর, কর্মসমিতির বৈঠকে যাতে তাঁরা বাধা না দেন সেইজন্য আন্দোলনকারীদের অনুরোধও করেন আধিকারিকরা। আন্দোলনকারীদের স্বার্থেই যে কর্মসমিতির বৈঠক করা জরুরি সেটাও বোঝানো হয়। শিক্ষাবন্ধু সমিতি রাজ্যের শাসকদলের কর্মী সংগঠন। আগেরবার কর্মসমিতির বৈঠকে রাজ্যের অনুমোদন না থাকায় তাঁরা বিরোধিতায় নেমেছিলেন। এবার কি তাহলে নিজেদের স্বার্থে কর্মসমিতির বৈঠক করতে দেবে শিক্ষাবন্ধু সমিতি? আর তারজন্যই কি আন্দোলনে ইতি টানা হল?
সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক রণজিৎ রায় অবশ্য কোনও বিতর্কে ঢুকতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, ‘আমাদের দাবি নিয়ে সদর্থক বার্তা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য। তাছাড়া টানা আন্দোলনে স্কলারশিপ, গবেষণার বহু কাজ আটকে ছিল। তাই সবদিক বিবেচনা করেই আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। যদি দাবি পূরণ না হয় তাহলে ফের আন্দোলন শুরু হবে।’ ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বপনকুমার রক্ষিত বা ফিন্যান্স অফিসার সুরজিৎ দাসকে ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন তোলেননি। বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মহেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘অস্থায়ী শিক্ষাকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি নিয়ে ফিন্যান্স কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। তবে কর্মসমিতির বৈঠক কবে হবে সেই তারিখ এখনও ঠিক হয়নি।’