শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: র্যাগিং রুখতে পাঁচ দফা দাওয়াই উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই ক্যাম্পাসে চালু হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পরিচয়পত্র। পড়ুয়া, গবেষকদের পাশাপাশি সেই পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিকদের জন্যও। পরিচয়পত্র না থাকলে এরপর থেকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন না কেউই। রাজ্যে সম্ভবত প্রথম কোনও সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর পরিচয়পত্র।
কর্তৃপক্ষ যখন পদক্ষেপের কথা বলছেন তখন র্যাগিং বিরোধী মঞ্চে কোনও রাখঢাক না রেখেই র্যাগিং এর জন্য শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও আধিকারিকদের একাংশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়েন্ট রেজিস্ট্রার তথা হস্টেল মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান স্বপন কুমার রক্ষিত। যা নিয়ে হইচই পড়েছে ক্যাম্পাসে। তবে স্বপনের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন পড়ুয়ারা। ১২ থেকে ১৮ অগাস্ট র্যাগিং বিরোধী সপ্তাহ পালনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি মিছিল ও সভা হয়। সেখানে পড়ুয়া, গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, আধিকারিক সব স্তরের প্রতিনিধিরাই উপস্থিত ছিলেন। ক্যাম্পাসের ল মোড় থেকে মিছিল যায় রবীন্দ্র-ভানু মঞ্চ পর্যন্ত।
মঞ্চে র্যাগিং নিয়ে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য রথীন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্য আধিকারিকরা। প্রত্যেকেই জানান, গত বারো বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকার কথা জানান উপাচার্য। সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বপন বলেন, ‘শুধুমাত্র উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা নীচু ক্লাসের পড়ুয়াদের র্যাগিং করে তা কিন্তু নয়। দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি র্যাগিংয়ে জন্য শিক্ষকদের একাংশও দায়ী। আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিভিন্ন সময় সেই ধরণের নানা অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। তাই সকলের কাছে অনুরোধ সবাই মিলেমিশে থাকুন ও ক্যাম্পাসের সুনাম বজায় রাখুন।’
স্বপন বক্তব্যের মাঝেই ঘনঘন হাততালি দিতে থাকেন দর্শক মঞ্চে উপস্থিত পড়ুয়ারা। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কী উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে র্যাগিং বা হেনস্তার কোনও অভিযোগ জমা পড়েছে কর্তৃপক্ষের কাছে? যদিও সেই ধরণের অভিযোগ নেই বলেই জানিয়েছেন স্বপন থেকে রথীন সকলেই। যদিও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নানা ফিসফাস শুরু হয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি কেউই। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নুপূর দাসের কথায়, যে কেউই নাম গোপন রেখে আমাদের ঘটনার কথা জানাতে পারেন। তাহলেও আই মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য জানিয়েছেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড ছিল। সেই সংখ্যা বাড়িয়ে তিন করা হয়েছে। জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাসের জন্য একটি স্কোয়াড কাজ করবে। অন্য দুটি স্কোয়াড থাকবে মূল ক্যাম্পাসে। মূল ক্যাম্পাসে একটি স্কোয়াড ছাত্রদের জন্য, অন্য স্কোয়াডটি ছাত্রীদের জন্য আলাদাভাবে কাজ করবে। স্কোয়াডের বেশিরভাগ সদস্য হিসাবে রয়েছেন শিক্ষকরাই। এর বাইরে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি আছে। হস্টেল মনিটরিং কমিটি, সুপার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার এবং অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড মাসিক বৈঠক করে হস্টেলের সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করবে।
প্রযুক্তি নির্ভর পরিচয়পত্রে কিউআর কোড, বার কোড, আরএফআইডি প্রযুক্তি থাকবে। কার্ড চিপ থাকবে। সেখানে পড়ুয়ার যাবতীয় তথ্য আপলোড করা থাকবে। ওই পরিচয়পত্র বহুমুখী কাজ করবে বলেই জানিয়েছেন রথীন। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুসারে, একটি কার্ড দিয়ে উপস্থিতি জানানো, লাইব্রেরি ব্যবহার করা, ক্যান্টিন সহ অন্য ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া সব কাজই করা যাবে। আপাতত লাইব্রেরি ছাড়া ক্যাম্পাস বা নির্দিষ্ট বিভাগে প্রবেশের ক্ষেত্রে কার্ড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না ঠিকই। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এমন প্রযুক্তি চালু করা হবে যাতে ক্যাম্পাসের মূল গেটে কার্ড স্ক্যান না করলে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। একই ব্যবস্থা চালু হবে প্রতিটি বিভাগে। সেক্ষেত্রে ক্লাসে প্রবেশ করতে হলেও কার্ড স্ক্যান করতে হবে।
রথীনের কথায়, গুজরাটের একটি সংস্থা কার্ড তৈরির কাজ করছে। সেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি শিক্ষাবর্ষে নবাগতদের ভর্তির পরেই কার্ড দিয়ে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে ওই কার্ডের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয়ভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হবে। কার্ড ছাড়া কেউই কোনওরকম সুবিধা পাবে না। স্নাতকোত্তরের পাঠ শেষ হওয়ার পরও কয়েকজন প্রাক্তন পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন হস্টেলে ঘর দখল করে আছেন বলে এদিন অভিযোগ ওঠে। ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের বক্তব্য, ‘ওরকম কথা আমিও শুনেছি। যদি তেমন কেউ থাকে তাদের হস্টেল ছাড়তে বলা হয়েছে।’