- শুভাশিস দাশ
একটা সময় ছিল যখন দিনহাটা নিয়ে আমাদের গর্ব হত। দিনহাটার বাইরে গেলে লোকে বলত আপনি দিনহাটার? কমল গুহর জায়গার মানুষ? কিংবা বলত আপনি উমেশ মণ্ডল, ফজলে হক সাহেবের দেশের মানুষ? রাজনীতি ছিল, আছে এবং থাকবে কিন্তু আজ আর সেদিনের রাজনীতি নেই।
এখন দিনহাটার রাজনীতির ময়দানে দুই মন্ত্রীর কাদা ছোড়াছুড়ি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। এ যেন মস্তানরাজ। সামনেই প্রীতির উত্সব দোল। দোলের তৃতীয় দিন কাদাখেলার একটা রেওয়াজ আছে এই অঞ্চলে। অনেকেই বলছেন দুই মন্ত্রীর তাহলে কি অকাল কাদাখেলা?
একদিকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক অপরদিকে রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ।
দিনহাটার মাটিতে উদয়ন গুহ আক্রান্ত হয়েছিলেন অপর দিকে নিশীথ প্রামাণিক বুড়িরহাটে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এই আক্রমণ এবং পালটা আক্রমণের খেলা দিনহাটার রাজনীতিকে উত্তপ্ত করেছে।
ভোট এলেই আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে এই কাদাখেলা। বক্তব্য গড়িয়ে যায় ধ্বস্তাধ্বস্তিতে, এ যেন স্কুল পড়ুয়া বালখিল্য বালকের টিফিন ভাগের দৃশ্য।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে দৃশ্য দিনহাটার মানুষ দেখলেন তা একেবারেই অনভিপ্রেত। বিগত দিনেও আমরা দেখেছি ভোট এলেই এই দুই দলে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় দিনহাটার আনাচে-কানাচে। অথচ বৃহত্তর গণতন্ত্রের এই দেশ মানুষের কথা বলার অধিকার, মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার যে পথ নির্দেশ দেয় তা আজ দিনহাটায় ব্যাহত।
গত বিধানসভা নির্বাচনের উপনির্বাচনের সময় আমরা দেখেছি কী ভয়ানক পরিস্থিতি। অন্য ভোটদাতাদের সঙ্গে এই প্রতিবেদক সপরিবার যার শিকার হয়েছিলেন ভোট দিতে গিয়ে। শাসকদলের চোখরাঙানি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নষ্ট করার একটা যন্ত্র হয়ে উঠেছিল যা বলার অপেক্ষা রাখে না। পাশাপাশি আমরা দেখেছি বিগত পুর নির্বাচনে দিনহাটা পুরসভার যে ভোট হয়েছে তা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
দিনহাটা এখন উত্তপ্ত এক রাজনৈতিক অঙ্গন। এই অঞ্চলের মানুষ ঘটনাগুলোকে আর নিতে পারছেন না। দুটো দলের দুই মন্ত্রী এখানে দল পালটানোর খেলায় মেতে উঠেছেন। এমনিতেই দুজনেই যখন তৃণমূল দলে ছিলেন, তখন প্রধান দল এবং যুব গোষ্ঠীর একটা প্রচ্ছন্ন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছিলই। যার ফলে আজকের এই পরিণতি বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। বিগত কয়েক বছর থেকে ভোট এলেই এই দুই দলের যে তাণ্ডব শুরু হয় তা দিনহাটাকে ভাবিয়ে তোলে।
অথচ এই দিনহাটায় দেখেছি একটা সময় রাজনীতিতে যে সৌজন্যবোধ ছিল তা আজ এই দুই মন্ত্রীর রেষারেষিতে তলানিতে ঠেকেছে।
কার কতটা দোষ এ বিচার করা দুরূহ। কিন্তু এই প্রকাশ্য সংঘর্ষ এবং রেষারেষি তা একেবারেই কাম্য ছিল না দুই নেতার কাছ থেকে। মানুষ ভোলেনি শীতলকুচির ঘটনা, ভোলেনি বাসন্তীহাটের রতন হত্যার ঘটনা। শাসকদল কর্তৃক বিরোধী দলের পার্টি অফিস ভাঙা এবং দখল আজও ভুলতে পারেনি দিনহাটার শান্তিপ্রিয় মানুষজন।
রাজনৈতিক এই অস্থিরতা শুধু মানসিক অশান্তিই নয়, অর্থনীতির উপরেও একটা বড় প্রভাব ফেলে। দিনহাটার সাধারণ মানুষ আগাগোড়াই শান্ত, শান্তিপ্রিয়। নেতারা যেন কথাটা মনে রাখেন।
(লেখক শিক্ষক। দিনহাটার বাসিন্দা)