বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: এও সম্ভব! মাত্র দু’লক্ষ টাকায় মেয়ের ‘ইজ্জত’ বিক্রি করলেন বাবা। ধর্ষকের পরিবারের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করেই তিনি মেয়ের সম্ভ্রম বাবদ দু’লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। এই ঘটনায় (Raiganj Rape) শোরগোল পড়েছে উত্তর দিনাজপুরে (Uttar Dinajpur)।
জানা যাচ্ছে, এই ঘটনা নিয়ে গ্রামের এক প্রভাবশালীর মদতে একাধিক সালিশি সভা বসেছিল। ২০২৩ সালের ২১ জুন থেকে দফায় দফায় সালিশি সভা বসে। সভার নিদান মেনে সোমবার ধর্ষিতার বাবাকে সমস্ত টাকা চুকিয়েছেন ধর্ষকের পরিবারের সদস্যরা।
অভিযুক্ত ছেলের বাবার বক্তব্য, ‘আমার একমাত্র ছেলে। বাড়িতে কোনও কিছুর অভাব নেই। আমার ছেলেকে ফাঁসাতে মিথ্যে মামলা করেছিল। এর জন্য ছেলেকে জেলও খাটতে হয়। ওদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে মেয়ের বাবার সঙ্গে টাকা দিয়ে রফা করি। এলাকার প্রভাবশালীদের উপস্থিতিতে আমি মেয়ের বাবাকে দু’লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছি।’
এপ্রসঙ্গে রায়গঞ্জ জেলা আদালতের পকসো কোর্টের সরকারি আইনজীবী শেখর পাল বলেন, ‘এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। আরও কয়েকটি এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিচারক অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করেছেন। ১০ হাজার টাকা করে ফাইন করেছেন। এই ঘটনাটিও আমার কানে এসেছে। আজ বিচারককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সালিশি সভার মাধ্যমে মামলার কখনও নিষ্পত্তি হয় না। মামলা চলবেই। তবে এরা ট্রায়ালের সময় যে সাক্ষ্য দেয় তাতে আসামিরা পার পেয়ে যায়। কখনও বলে, জমি সংক্রান্ত বিবাদের জন্য পকসো কেস করা হয়েছে। কখনও আবার অন্য অজুহাত দেয়। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে সেটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হবে। পকসো আইনের গুরুত্বও কমে যাবে।’
রায়গঞ্জ জেলা আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী আশিস সরকার বলেন, ‘পকসো খুব কঠোর আইন। এই আইনে যারা ধরা পড়ে, সাধারণত তাদের জেল হেপাজতে রেখে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত জেল হেপাজতে থাকতে হয়। সালিশি সভার মাধ্যমে একটি পকসো কেসকে যতই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হোক না কেন, আইনি প্রক্রিয়া চলবেই। সালিশি সভার মাধ্যমে যদি এই মামলার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা হয়, তবে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। এক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা প্রয়োজন।’
এদিকে পুলিশ বলছে, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ১৭ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল এক যুবকের বিরুদ্ধে। পকসো আইনে মামলা রুজু হয়। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতকে সংশোধানাগারে রেখে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর বিচারক অভিযুক্তকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন। এদিন সকালে মেয়ের বাবা অভিযুক্ত যুবকের পরিবারের কাছ থেকে দু’লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন।