কালিয়াগঞ্জ: র্যাশন জালিয়াতি নিয়ে যখন উথাল পাথাল চলছে রাজ্যে, খোদ মন্ত্রীই যখন এই র্যাশনকাণ্ডে জড়িয়ে জেলে রয়েছেন, ঠিক তখনই, কালিয়াগঞ্জেও র্যাশন দুর্নীতির নিদর্শন দেখা গেল। খবর চাপতে সাংবাদিকদের প্রভাবিত করার চেষ্টারও ত্রুটি রাখলেন না অভিযুক্তরা। দুর্নীতির কেন্দ্রে কালিয়াগঞ্জ শহরের মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকার সমবায় পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ কো অপারেটিভ স্টোর্স লিমিটেড।
দোকানের কিছু কর্মীর সঙ্গে স্থানীয় ফড়েদের আমে-দুধে সম্পর্কের জেরে সঠিক পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন গ্রাহকরা। আগেও এই মহেন্দ্রগঞ্জ কো অপারেটিভ সোসাইটির র্যাশনের দোকানের সামনে ফড়েদের সঙ্গে স্থানীয় নাগরিকদের বচসার ঘটনাও ঘটেছে।
বুধবার যা ঘটেছে তা খানিকটা এইরকম। বেলা ১১টা নাগাদ মহেন্দ্রগঞ্জ সংলগ্ন র্যাশনের দোকানের ভিতর একটি টোটোর মধ্যে চার বস্তা সরকারি চাল রাখা ছিল। গোডাউন ঘরের ভিতর আরেকটি বস্তায় সরকারি চাল ভরছিলেন টোটোচালক শোভন দেবনাথ। কোথায় যাবে এই চালের বস্তা? টোটোচালককে প্রশ্ন করলে তিনি হাঁ করে নিজেকে র্যাশন দোকানের সেলসম্যান পরিচয় দেওয়া ভানু মোদকের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ভানুবাবু বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন।
এদিকে মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকার এই র্যাশনের দোকানের কিছু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেঠ কলোনির বাসিন্দা এক ফড়ের কথায়, ‘র্যাশন থেকে নাগরিকদের না নেওয়া চাল আমরা র্যাশনের দোকান থেকে আড়াই হাজার টাকা কুইন্টাল দরে কিনে নিয়ে বাজারে বিক্রি করি। দিলেন তো আজকের ব্যবসা মাটি করে।’
ঘটনার সময় উপস্থিত সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, একাধিক সরকারি চালের বস্তা টোটোয় করে কোথায় যাচ্ছিল? একজন টোটো চালক কেনই বা র্যাশনের গোডাউনের মেঝেতে পড়ে থাকা চাল বস্তা বন্দি করছিলেন? কেনই বা ওই র্যাশনের দোকানের কর্মী ভানু মোদক খবরটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সবার সামনে সাংবাদিকদের জোর করছিলেন?
তবে, মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলার তথা কালিয়াগঞ্জ পুরসভার উপ পুরপিতা ঈশ্বর রজক জানান, ‘সাধারণ নাগরিকদের যথাযথ র্যাশন সামগ্রী পাওয়ার অধিকার রয়েছে। র্যাশন দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের, কঠিন শাস্তি চাইছি আমি। যে কোনও ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কালিয়াগঞ্জ পুরসভা কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিন ধরে ভানু মোদক এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা এ ধরণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। লোক বুঝে নাগরিকদের সরকারি দ্রব্য কম করে দেওয়ার রেওয়াজ এখানে। পাবনা কলোনির বাসিন্দা ভানুর সঙ্গে স্থানীয় ফড়েদের রয়েছে। ভানু মোদক র্যাশনের দোকানে এলেই মহেন্দ্রগঞ্জ র্যাশনের দোকানকে ঘিরে মাছির মত ভ্যানভ্যান করে এই ফড়েরা। যারা প্রতিবাদ করেন একমাত্র সেই সব গ্রাহকদের সঠিক পরিমাণ সরকারি সামগ্রী দিয়ে থাকেন এই ভানু।’
মহেন্দ্রগঞ্জ কো অপারেটিভ সোসাইটির ম্যানেজার বিশ্বনাথ সাহার ফোন সুইচ অফ থাকায় বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে নি। তবে, বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির কাউন্সিলার তথা শহর মণ্ডল সভাপতি গৌরাঙ্গ দাসের অভিযোগ, ‘দীর্ঘদিন ধরে কালিয়াগঞ্জের বিভিন্ন র্যাশনের দোকানে দুর্নীতি চলছে। নাগরিকরা সোচ্চার হচ্ছে। দেখছি, দেখবো বলে কাটিয়ে দিচ্ছেন শহরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফুড ইন্সপেক্টর। উনিও এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।’ কালিয়াগঞ্জ পুরসভার র্যাশন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই ইউমি কুলসুমকে এবিষয়ে ফোনে জিজ্ঞেস করলে উনি বিষয়টি জেনে উত্তর দেবেন বলে একটু সময় চেয়ে নেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর জবাব আর মেলেনি।