সানি সরকার, শিলিগুড়ি: সন্ধে হলেই মনে পড়ে যায় নানা পাটেকরের সেই বিখ্যাত ফিল্মি ডায়ালগ, ‘এক মচ্ছর…!’ কেননা, প্রতিটি বাড়িতেই শোনা যায় হাততালির শব্দ। যা চলতে থাকে রাত পর্যন্ত। বিছানায় যাওয়ার পরেও যে শান্তি মেলে, তা নয়। কানের পাশে বাজতে থাকে সেই সানাইয়ের সুর। যা নিয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে শহরের (Siliguri) সর্বত্র। অভিযোগ উঠেছে, ভোট নিয়ে পুরকর্তারা ব্যস্ত থাকার ফলেই মশাদমনে মনোযোগ নেই। তাই এমন পরিস্থিতি বলে অনেকেই মনে করছেন।
বর্ষা শুরু না হতেই যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তবে বর্ষার পর কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ফের ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেবে না তো শহরে? এই আতঙ্ক গ্রাস করছে শহরের বাসিন্দাদের। এদিকে পুরনিগম (Siliguri Municipal Corporation) বলছে, মশার (Mosquito) উপদ্রব রোধে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের দাবি, ‘আমরা গালে হাত দিয়ে বসে নেই। সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি ভেক্টর কন্ট্রোল টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে যাতে সুষ্ঠুভাবে আবর্জনা পরিষ্কার হয় এবং মশা মারার স্প্রে যাতে নিয়মিত করা হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে।’
সামান্য বৃষ্টি হতেই শহরে মশার উপদ্রব শুরু হয়ে গিয়েছে। যা থেকে স্পষ্ট যে নিকাশিনালাগুলি নিয়মিত ঠিকমতো পরিষ্কার হচ্ছে না শহরের কোথাও। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টাতেও কলেজপাড়ার মতো এলাকায় আবর্জনার স্তূপ দেখা গিয়েছে। জঞ্জাল সাফাই তো দূরের কথা, সেখানে বরং পুরনিগমের একটি গাড়ি থেকে আবর্জনা ফেলতে দেখা গিয়েছে। শুধু ১৭ নম্বর ওয়ার্ড নয়, শহরের একাধিক পাড়াতেই এখন দুপুর পর্যন্ত আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেবাশিস কলোনির বাসিন্দাদের বক্তব্য, এলাকায় কবে শেষবার নর্দমা পরিষ্কার হয়েছিল, তা তাঁরা ভুলেই গিয়েছেন। দক্ষিণ ভারতনগরের বাসিন্দা সুদীপা দাস বলেন, ‘নিকাশিনালা ঠিকমতো পরিষ্কার হলে এইসময় মশার উপদ্রব এতটা হয় না।’ শুধু ২৪ নম্বর ওয়ার্ড নয়, হায়দরপাড়া, দেশবন্ধুপাড়া, সুভাষপল্লি, সূর্যনগর, শহরের প্রায় সর্বত্র দিনদিন বাড়ছে মশার উপদ্রব। কলেজপাড়ার শ্যামল সরকারের অভিযোগ, ‘ভোট প্রচার এবং দলের কাজে কাউন্সিলাররা ব্যস্ত হয়ে পড়াতেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা ভোটার, কিন্তু আমাদের কথা কে ভাবে?’
এই সময় মশার বাড়বাড়ন্ত দেখে অনেকেই অগাস্ট-সেপ্টেম্বর নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সাধারণত বর্ষা শেষে শহরে ডেঙ্গি পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গত কয়েক বছরের নিদারুণ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শিবরামপল্লির যতীন পাল বলেন, ‘বর্ষা এলেই আতঙ্ক বেড়ে যায়। বুঝতে পারছি না এবছর কী হবে। তবে ভোট শেষের পরই যেহেতু বর্ষা, আশা করছি পুরনগম ডেঙ্গি রোধে পদক্ষেপ করবে।’ একই কথা শোনা গিয়েছে বাবুপাড়ার সৌরভ মজুমদার, সূর্যনগরের তমাল দাসের মুখেও।