তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: কোথাও নগরায়ণের জন্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। কোথাও আবার নদী অলিখিত ডাস্টবিন হয়ে ওঠায় বিলুপ্ত হচ্ছে মাছ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পরিবেশ দূষণের ফলে কীভাবে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তা নিয়ে সবুজ মঞ্চের তরফে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় মঙ্গলবার। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা নিজেদের জেলার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের কী ভূমিকা রয়েছে, সেদিকেও আলোকপাত করা হয়। হিলকার্ট রোডে ন্যাফের অফিসে এদিনের আলোচনা সভার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন সবুজ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত।
আজ থেকে কুড়ি বছর আগে শিলিগুড়ি (Siliguri) যা ছিল, আজ তার কিছুই নেই বললেই চলে। একদিকে গাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। অন্যদিকে, আবর্জনা ফেলে দিন-দিন বিষাক্ত হয়ে উঠছে মহানন্দা নদী। প্রচুর মাছ হারিয়ে গিয়েছে। গত বছর সিকিমের ভয়াবহ হরপার জন্য ঘোলা হয়ে গিয়েছে তিস্তার জল। এদিনের আলোচনা সভায় পরিবেশ দূষণের এইসব দিকগুলোর কথাই তুলে ধরেন পরিবেশপ্রেমীরা।
জলপাইগুড়ি থেকে আসা প্রতিনিধি শৈবাল কুণ্ডু বলেন, ‘গরুমারা সংলগ্ন লাটাগুড়িতে অসংখ্য হোটেল, হোমস্টে জঙ্গল কেটে তৈরি করা হচ্ছে। যার ফলে বন্যপ্রাণীরা বিপদে পড়ছে। তিস্তা এবং অন্য নদীর চরে চাষের কাজে প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে।’
মালদার পরিবেশপ্রেমীরা জানান, মালদার (Malda) বেহুলা নদী এই সংকটেরই একটা উদাহরণ। নদীতে মাছ না পেয়ে অনেক মৎস্যজীবী নিজেদের পেশা বদলে ফেলেছেন। বেশি মুনাফার জন্য মালদায় আমবাগান কেটে সেই জমি অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিলাসন এলাকায় একটি হিজল বন আছে। সেই বনটি বাঁচানোরও দাবি তোলা হয়।
আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন ত্রিবেশ তালুকদার। তিনি জানালেন, সিঙ্গিঝোরার জল আগে খাওয়া যেত, এখন নদীর জল সম্পূর্ণ বিষাক্ত। ভুটানে যথেচ্ছ পরিমাণে ও অবৈজ্ঞানিক পন্থায় ডলোমাইট খননের ফলে হাউড়ি নদীর গতিপথ এবং বিস্তৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে।’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা অসীম অধিকারী অবিলম্বে সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা হবে আশ্বস্ত করেছেন।
শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যাপক অভিজিৎ মজুমদার শহরের বেশ কয়েকটি সমস্যা তুলে ধরেন। পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা অমিত জৈন বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের যথাসম্ভব চেষ্টা করব।’ প্রতিটি সমস্যার সমাধান না হলে পরিবেশ দূষণ যে আটকানো যাবে না তা জানালেন পরিবেশপ্রেমী অনিমেষ বসু। তিনি বলেন, ‘উত্তরের প্রতিটি জেলার প্রতিনিধিরা এখানে এসে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সমস্যা তুলে ধরেছেন। যাতে গুরুত্বসহকারে বিষয়গুলোর সমাধানের ব্যবস্থা করা হয়।’