সৌরভ দেব, জলপাইগুড়ি : দ্য কেরালা স্টোরি। ধর্মান্তরণের মতো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে এই সিনেমার চর্চা এখন দেশজুড়ে। বাংলায় রাজ্য সরকারের তরফে দ্য কেরালা স্টোরির প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় এই সিনেমা নিয়ে আরও বেশি করে চর্চা শুরু হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যে সিনেমা দেখার জন্য সওয়াল করেছেন, তার কাহিনী নিয়ে যতটা আলোচনা হচ্ছে, পরিচালককে নিয়ে অবশ্য ততটা নয়। অনেকেই জানেন না, এই সিনেমার বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেন আদতে জলপাইগুড়ির ভূমিপুত্র। সুদীপ্ত এখন কাজের সূত্রে মুম্বইয়ে থাকলেও জলপাইগুড়িতে থাকেন তাঁর দাদা মনোজ সেন। তাঁর মেয়ে অঙ্গনা আবার দ্য কেরালা স্টোরির প্রোডাকশন ডিজাইনারের দায়িত্ব সামলেছেন।
জন্মেছিলেন শহরের রায়কতপাড়ায়। তবে বাবার চাকরির সূত্রে উত্তরবঙ্গের আরও কয়েকটি জেলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সুদীপ্ত। ছয় বছর আগে শেষবার জলপাইগুড়িতে এলেও দাদার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। এই রাজ্যে নিষিদ্ধ হলেও, যেসব রাজ্যে দ্য কেরালা স্টোরি চলছে সেখানে সিনেমাটি ভালোই ব্যবসা করছে বলে বক্স অফিস রিপোর্ট জানাচ্ছে। ভাইয়ের সিনেমা নিয়ে উচ্ছ্বসিত মনোজও। তিনি মনে করেন, সকলকেই সিনেমাটি দেখতে দেওয়া উচিত। তারপর সমালোচনা হোক।
বর্তমানে জলপাইগুড়ি শহরের নিউটাউনপাড়ায় থাকেন মনোজ। রায়কতপাড়ার বাড়ি অনেক দিন আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বুধবার মনোজ জানালেন সুদীপ্তর ছোটবেলার কথা। ভাইয়ের জন্মতারিখ মনে করতে না পারলেও মনোজ জানান, ছয়ের দশকে রায়কতপাড়ার বাড়িতেই জন্মেছিলেন সুদীপ্ত। বাবা দিলীপকুমার সেন ছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী। জলপাইগুড়িতে জন্ম হলেও বাবার চাকরি সূত্রে সুদীপ্তর ছোটবেলার কিছুটা সময় কেটেছে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার আলিপুরদুয়ারে। বাবা বদলি হওয়ায় কয়েক বছর কোচবিহারের একটি স্কুলে পড়াশোনা করেন। পরে দিলীপবাবু যখন ফের জলপাইগুড়িতে ফিরে আসেন, তখন জলপাইগুড়ি জিলা স্কুলে দুবছর ছিলেন সুদীপ্ত। তারপর বাবার আবার বদলির সূত্রে শিলিগুড়ি বয়েজ স্কুলে নতুন করে দুবছরের ছাত্রজীবন। স্কুলের পড়া শেষ করে কলকাতার সিঁথির মোড়ের একটি বাড়ি থেকে কলেজের পাঠ শেষ করেন সুদীপ্ত। তারপর সেখান থেকে দিল্লি, তারপর মুম্বই পাড়ি। এখন সেখানেই নিজের ফ্ল্যাট।
মনোজ নিজেও জলপাইগুড়ি শহরের পরিচিত মুখ। জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ভাইকে নিয়ে যথেষ্ট গর্বিত তিনি। মাস দুয়েক আগেও স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মুম্বইয়ে ভাইয়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে ছিলেন মনোজ। তখন দেখেছেন দ্য কেরালা স্টোরির চূড়ান্ত পর্যায়ে কাজ নিয়ে ভাইয়ের রাতজাগা পরিশ্রম। এর আগেও বেশ কয়েকটি ডকুমেন্টারি ও সিনেমা বানিয়েছেন সুদীপ্ত। তার মধ্যে কয়েকটি বিশ্বমঞ্চেও প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে মনোজের মতে, দ্য কেরালা স্টোরিই ভাইয়ের সব থেকে বড় ছবি।
ভাইয়ের সিনেমা নিয়ে এত বিতর্কের কোনও কারণই খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর বক্তব্য, আমি এখনও এই ছবি দেখিনি। তবে মনে করি সকলকেই এই ছবি দেখতে দেওয়া উচিত। সবাই আগে দেখুক, তারপরেই আলোচনা এবং সমালোচনা হোক। যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সেটা নিয়ে সমালোচনা হোক। তবে কখনোই সিনেমা নিষিদ্ধ করা উচিত নয় বলে ব্যক্তিগত মত।
মনোজ এখনও ভাইয়ের সিনেমা দেখে উঠতে না পারলেও কাকার সিনেমার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন সুদীপ্তর ভাইঝি অঙ্গনা। তিনি নিজেও যথেষ্ট নামী। এর আগে বলিউডের সিনেমা তানহাজির প্রোডাকশন ডিজাইনের দায়িত্ব সামলেছেন অঙ্গনা। কাকার সিনেমাতেও কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত তিনি। মুম্বই থেকে ফোনে জানালেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। অঙ্গনা জানান, কাকা যখন দ্য কেরালা স্টোরির গল্প লিখছিলেন, তখন থেকেই গোটা ঘটনা জানতে পারছিলেন। কাকা নিয়মিত তাঁকে গল্প পড়ে শোনাতেন ও ছবির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন।
কীভাবে সুদীপ্তর মাথায় এমন এক গল্পের ভাবনা এল? উত্তরে অঙ্গনা বললেন, কাকা খুব ভালো মনের একজন মানুষ। মহিলাদের সম্মান করা এবং মহিলাদের অধিকার পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় চেষ্টা করেন। এই ছবির সঙ্গে মিল রয়েছে, এমনই এক বাস্তব ঘটনা কাকা জানতে পেরেছিলেন। সেই বিষয়টির ওপর তিনি দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ এবং গবেষণার পরেই দ্য কেরালা স্টোরি লেখার ভাবনা আসে।
সিনেমা নিয়ে বিতর্ক বা নিষিদ্ধ করা নিয়ে খানিক বিরক্তই অঙ্গনা। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি মনে করি, এটা নিয়ে এত বিতর্ক বা চর্চা হওয়ার কিছু নেই। এখানে চারটি মেয়ে একটা গল্প তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েদের কিছু বাস্তব সমস্যার কথা বলা হয়েছে। এই ছবি প্রত্যেকের দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।’