দার্জিলিং: দৃশ্যটা বুধবারের। দার্জিলিংয়ের ম্যালে সেদিন ভরদুপুরে বিজেপির সভা চলছে। একের পর এক নেতা তারস্বরে বক্তব্য রাখছেন। কিন্তু কানফাটা এই আওয়াজেও ওঁরা নির্লিপ্ত। আপনমনেই যেন প্রত্যেকে পাহাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। মহাকাল মন্দিরের রাস্তা থেকে বেরিয়ে একদল গিয়ে বসলেন ম্যালের একেবারে কোনায়। গ্লেনারিজ, কেভেন্টার্সের সামনেও তখন চেনা ভিড়।
পাশেই একটি দোকানে তখন ক্রেতার সঙ্গে দরদামে ব্যস্ত এক জার্সি ব্যবসায়ী। রাজনীতিতে মন নেই তাঁদেরও। বরং পর্যটক ‘সেবা’তেই ব্যস্ত। এ যেন এক নতুন পাহাড়। যেখানে নেই ভোট-ভীতি। বৃহস্পতিবারের দৃশ্যটাও ছিল একইরকম। কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থীর মনোয়নপত্র পেশ ঘিরে যখন উচ্ছ্বাস হাত ও হামরো পার্টির শিবিরের, তখন দিব্যি সেলফিতে মজে বাঙালি পর্যটকরা। কলকাতার বৃদ্ধ সুকুমার চক্রবর্তী থেকে শুরু করে চেকোশ্লোভাকিয়ার তরুণী মারিয়ার যেন কোনও ভ্রূক্ষেপই নেই। সুকুমার বলছিলেন, ‘রাতে আবার ম্যালে আসব। এখন বরং মহাকাল মন্দির থেকে ঘুরে আসি।’
২০১৭ সালে অগ্নিগর্ভ পাহাড় দেখে ভয় পেয়েছিলেন পর্যটকরাও। তারপর যে ক’টা ভোট এসেছে, উৎসবের আমেজে মাততে পারেননি তাঁরা। পাহাড়ে পা রাখা তো দূর, ভোটের আগে এখানে আসার কল্পনাও করেননি তাঁরা। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই রাজনৈতিকভাবে আপাত শান্ত রয়েছে পাহাড়। কোথাও বিন্দুমাত্র তাপ-উত্তাপ নেই। সাতসকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা উঁকি দিতেই যেন দিনের প্রথম হাসিটা হেসে ওঠে পাহাড়। আর তাই ভয় উড়িয়েই পর্যটকরা আবার পাহাড়মুখো। এমনকি ভোটের আগেও।
দার্জিলিংয়ের হোটেল, হোমস্টেগুলিতেও ভিড় বেশ ভালোই। আর তাতেই লক্ষ্মীলাভের আশায় ম্যালের ব্যবসায়ীরা। বছর কুড়ি ধরে সেখানে ব্যবসা করছেন এক প্রবীণ ব্যবসায়ী। তিনি বলছেন, ‘কত রাজনৈতিক হিংসা, মারামারি দেখেছি। কতদিন লাগাতার ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে এখন অনেক ভালো আছি।’
কলকাতার পর্যটক শ্রাবণী চক্রবর্তীর কথায়, ‘ভোট হবে ভোটের মতো। আমরা ঘুরতে এসেছি। ক’দিন ঘুরব। তারপর চলে যাব। তাই ওসব নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।’ একই কথা শোনা গেল মধুসূদন ভট্টাচার্যের গলাতেও।
চেকোশ্লোভাকিয়ার মারিয়া আবার মহাকাল মন্দিরে পুজো দিয়ে ম্যালের দিকে আসছিলেন। ম্যালে তখন গোর্খাল্যান্ডের সমর্থনে তৈরি গানের তালে তালে নেচে চলেছেন বিভিন্ন দলের সমর্থকরা। সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মারিয়া বললেন, ‘বিজেপির পতাকা দেখছি চারদিকে। এখানে কি বিজেপি শক্তিশালী? তবে সকাল থেকে বেশ জমজমাট ম্যাল চত্বর। ভালোই লাগছে এত মানুষজন দেখে।’ মারিয়ার মতো মুচকি হাসছে পাহাড়ও। ভোটের ভয় উড়িয়ে।