নাগরাকাটাঃ জন্মের পর থেকেই দু’চোখে অন্ধকার। তাতে কী, শুধু নিষ্ঠা আর একাগ্রতার জেরে মাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল করল কোচবিহারের মিশন ব্লাইন্ড স্কুলের দুই দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী। শুধু নিজেদের বাড়িতেই নয়, গোটা এলাকায় দীপাবলির রোশনাই জ্বাললো নাগরাকাটার দুই বন্ধু। তাঁদের দুজনের বাড়িও আবার পাশাপাশি দুই চা বাগানে। তাদের নাম নির্মল টোপ্পো ও সুহান মঙ্গর। কোচবিহারের মিশন ব্লাইন্ড স্কুল থেকে এবার তাঁরা যথাক্রমে ৭২ ও ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছে। ওঁদের কৃতিত্বকে কুর্ণিশ জানাচ্ছে প্রশাসন ও শিক্ষা আধিকারিকদের প্রত্যেকেই।
নির্মল টোপ্পোর বাড়ি গ্রাসমোড় চা বাগানের চার নম্বর লাইনে। বাবা নেই। মা জেনেভিবা বাগানের শ্রমিক। অভাবের সংসার। অন্যদিকে সুহান মঙ্গরের বাড়ি গাঠিয়া চা বাগানের নিউ লাইনে। তাঁর বাবাও পেশায় চা শ্রমিক। দু জনেই একটা সময় বিশেষভাবে সক্ষম ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমগ্র শিক্ষা মিশন পরিচালিত চ্যাংমারি চা বাগানের রিসোর্স সেন্টারে পড়াশোনা করতো। তাঁদের একাগ্রতা ও নিষ্ঠা দেখে পরে সেখানকার স্পেশাল এডুকেটার কাজী মেহবুব আলম আরও ভালো মানের পড়াশোনার জন্য তাঁদের কোচবিহারের দৃষ্টিহীনদের স্কুলটিতে পাঠান। সেখানে থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে তাঁরা কোচবিহার টাউন স্কুলে রাইটার নিয়ে মাধ্যমিকে বসেন। শুক্রবার ফল প্রকাশ হওয়ার পর দেখা যায় নির্মলের প্রাপ্ত নম্বর ৫০৬। অন্যদিকে সুহান পেয়েছে ৪৯৩। মিশন ব্লাইন্ড স্কুলের সম্পাদক বিজয় রাজ ছেত্রী বলেন, অত্যন্ত আনন্দের দিন। দুজনের জন্যই গর্ব হচ্ছে। বিশেষভাবে সক্ষমদের পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক কাজী মেহবুব আলমের কথায়, মনে রাখতে হবে দুজনেই ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন। এই ধরনের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটাই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ওরা যে ফল করেছে তাতে বাহবা জানানোর ভাষা নেই।
নির্মল ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চায়। এবারে একাদশ শ্রেণীতে কোচবিহারের স্কুল থেকেই কলা বিভাগে পড়বে। অন্যদিকে সুহানেরও লক্ষ্য একই। একাদশে কলা বিভাগে ভরতি হয়ে সমাজের অন্ধকার দূর করার ব্রতকেই পাথেয় করেছে দুই সহপাঠী।