বুনিয়াদপুরঃ বুনিয়াদপুর পুরসভার একটি পুকুর থেকে কোদালের কোপে আবারও উঠে এল আস্ত এক প্রাচীন বিষ্ণুমূর্তি। শুক্রবার সাতসকালে মূর্তি উদ্ধারকে কেন্দ্র করে এলাকায় হইচই পড়ে যায়। মূর্তিটি পরিষ্কার করে পুকুরের পাশে এক বাড়ির বারান্দায় রেখে পূজার্চনা শুরু করেছেন এলাকাবাসী। খবর চাউর হতেই মূর্তি দেখতে ভিড় জমান এলাকাবাসী। যদিও প্রশাসনের তরফে বিকেল পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছায়নি।
তবে এই মূর্তি উদ্ধারের পর উঠেছে কিছু প্রশ্ন। কারণ মাত্র কয়েকদিন আগে এই পুকুর থেকেই উঠে এসেছিল আরও একটি প্রাচীন মূর্তি। আর প্রশ্নটা সেখানেই, তাহলে কি ওই পুকুরের নীচে রয়েছে কোনও ধ্বংসাবশেষ?
বুনিয়াদপুর পুরএলাকায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আম্বই বালিয়াখোঁড়া ছয় বিঘা বারোয়ারিতে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরের জল শুকিয়ে যাওয়ায় সামান্য জলে শুক্রবার মাছ ধরতে নামে গ্রামের খুদে থেকে বড়রা। শুক্রবার সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ গ্রামের শিবলাল মুর্মু কোদাল নিয়ে পুকুরে নেমে জল আটকে আল বাঁধতে শুরু করে। সাড়ে ৬টা নাগাদ তাঁর কোদালে একটা শব্দ অনুভব করেন। কোদালের আঘাতে উঠে আসে একটা বিষ্ণুমূর্তি। মূর্তিটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি। নিখুঁত কারুকার্যে কালোপাথরের উপর খোদাই করা মূর্তি। উচ্চতায় ২ ফুট ও চওড়াতে ১ ফুট। বিষ্ণুর চার হাত স্পষ্ট। হাতে গদা, শঙ্খ, চক্র, পদ্ম বোঝা যাচ্ছে। নীচ অংশে দুই দিকে লক্ষ্মী ও সরস্বতী রয়েছে। উল্লেখ্য, দু’মাস আগে ওই ওয়ার্ডেই মাটি খুঁড়তে দুটি বিষ্ণুমূর্তি পাওয়া যায়।
এলাকার বাসিন্দা শ্যামল সরকার বলেন, ‘সকালে খবর পেয়ে দেখি একটি বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার হয়েছে পুকুর থেকে। মূর্তিটি জেলা সংগ্রহশালায় রাখা দরকার। যাতে পরবর্তীতে গবেষণার কাজে লাগবে।’
ইতিহাস গবেষক ডঃ সমিত ঘোষ বলেন, ‘এটি কালো পাথরের তৈরি বিষ্ণুমূর্তি। দণ্ডায়মান অবস্থায় আছে। মস্তকের মুকুটের অলংকরণ সুন্দর। চারটি হাতে গদা ,পদ্ম, শঙ্খ ও চক্র রয়েছে। উন্মুক্ত পা ও ভগ্নমূর্তি। পাল যুগের তৈরি মূর্তি বলে মনে হচ্ছে। মূর্তির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। পাল যুগে যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাব ছিল এই মূর্তি তার ইঙ্গিত দেয়। দিনাজপুরের মূর্তিতত্ত্বের গঠনের যে নানা বৈশিষ্ট্য তা এতে বিদ্যমান । মূর্তিটির কিছু অংশ ভাঙা থাকার কারণে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেল। পাল যুগের দুই বিখ্যাত শিল্পী ধীমান ও বিত পালের তৈরি অনেক শিল্পকর্ম বরেন্দ্রভূমির আনাচেকানাচে ছড়িয়ে রয়েছে।’
বংশীহারী থানার আইসি অসীম গোপ জানিয়েছেন, ‘মূর্তি উদ্ধারের খবর পেয়েছি। নির্বাচনের দুই দলের শিডিউল প্রোগ্রামের কারণে এলাকায় যাওয়া হয়নি। এলাকায় সিভিককে নজরদারির কথা বলা আছে। খুব শীঘ্রই মূর্তিটিকে উদ্ধার করে যথাস্থানে পাঠানো হবে।’