উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ রাফা সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ গাজায় অবরুদ্ধ প্যালিস্তিনীয়দের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ পাঠানোর কাজ শুরু করে দিল মিশর। মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধের ১৫ দিনের মাথায় বেশ কয়েকটি ত্রাণবাহী ট্রাক সীমান্ত পেড়িয়ে প্রবেশ করতে দেখা যায়। মিশরীয় রেড ক্রিসেন্টের এক কর্তা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অবরুদ্ধ গাজার জন্য শনিবার ত্রাণ নিয়ে বেশ কয়েকটি ট্রাক মিশর থেকে রাফাহ সীমান্তে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ইজরায়েল গাজাকে সম্পূর্ণ অবরোধ ঘোষণা করে জল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করেছে।
ইজরায়েল হামাসের যুদ্ধ ১৫ দিনে পড়েছে। এখনও গাজার ওপর বোমা বর্ষ্ণ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল সেনা। এই যুদ্ধে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এখনও পর্যন্ত ইজরায়েলি হামলায় লাখ লাখ গাজাবাসী ভিটেমাটি হারিয়েছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিশর। একমাত্র রাফা সীমান্ত ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই এই অরক্ষিত সীমান্ত দিয়েই দক্ষিণ গাজায় প্যালেস্তিনীয়দের জন্য ত্রান পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে মিশর। মিশর সরকার কড়াভাবে জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বাস্তহারা প্যালেস্তিনীয়দের জন্যই শুধু ত্রাণসামগ্রী যাবে। যদিও এতদিন সীমান্ত খোলা নিয়ে টালবাহানা চলছিল। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে শয়ে শয়ে ট্রাক অপেক্ষা করছিল রাফা ক্রসিংয়ে। কিন্তু মিশর সরকারের সবুজ সঙ্কেত পায়নি। অবশেষে সমস্যা মেটাতে টেলিফোনে কথা হয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফতাহ আল-সিসির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের। দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনার পরেই রাফা ক্রসিং খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।
শনিবার এই রাফা ক্রসিং দিয়েই প্রাথমিকভাবে খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ২০টি ট্রাক রাফা সীমান্ত পেড়িয়ে যাত্রা শুরু করে বিপর্যস্ত এলাকায়। এই ত্রাণ গুলো পৌঁছে দেওয়া হবে প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের কাছে। তবে ওই ত্রাণ যেন শুধুমাত্র প্যালেস্তিনীয় জনতার জন্যই ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়েছে মিশর সরকার। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই হামাস যোদ্ধাদের এই ত্রাণ দেওয়া হবে না। যদি জানা যায় যে ত্রাণ হামাসদের কাছে পৌঁছচ্ছে, তাহলে আর কোনও মানবিক সাহায্য গাজায় পাঠানো হবে না।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতির তদারকি করতে রাফা ক্রসিংয়ের মিশরীয় দিক পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন “এই ত্রাণ পরিবাহী ট্রাকগুলি কেবল ট্রাক নয়, এগুলি একটি লাইফলাইন।”
প্রসঙ্গত, ইজরায়েলি সেনা ও হামাসের যুদ্ধে হাজার হাজার নিরীহ প্যালেস্তিনীয় বাসিন্দা প্রাণ হারিয়েছেন। যাঁরা কোনওরকমে বেঁচে গেছেন তাঁদের জন্য নিয়মিত ত্রাণ পাঠাতে কম করেও ১০০টা ট্রাক লাগবে। তাছাড়া ইউনিসেফের মেডিক্যাল কিট গাজার শিশুদের জন্য পাঠানো হয়েছে। দক্ষিণ গাজায় বিদ্যুৎহীন শহরে এখনও পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। পাশাপাশি চলছে লাগাতার বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে সহায়সম্বলহীন হয়ে রয়ে যাচ্ছেন তাঁরা খিদে-তেষ্টায় কাতর। বিদ্যুৎহীন গাজায় আহতদের চিকিৎসা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠেছে। পানীয় জলে মিশছে অস্ত্রের বিষ। হাসপাতালে ইজরায়েলি বোমারু বিমানের হানায় নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। সেখানে আহতদের অবস্থা সঙ্কটজনক। তাঁদের চিকিৎসাও অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কাজেই সেখানেও স্বাস্থ্য পরিষেবা দরকার বলে জানিয়েছে প্যালেস্তাইন সরকার।