Monday, April 29, 2024
Homeকলামবিজেপি হয়তো একতরফা নির্বাচন চায়

বিজেপি হয়তো একতরফা নির্বাচন চায়

  • রন্তিদেব সেনগুপ্ত

ঝাড়খণ্ডের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে ইডি গ্রেপ্তার করেছে। এই খবরটি শোনার পর এক রসিক ব্যক্তি সমাজমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন, ‘হেমন্ত থেকে হিমন্ত হয়ে গেলেই আর গ্রেপ্তার হতে হত না।’ এই একটি মন্তব্য থেকেই পরিষ্কার, বিজেপি সরকারের ইডি’র হাতে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার হওয়াকে পাঁচ পাবলিক কীভাবে দেখছে। সোজা কথায় বললে বিরোধী নেতাদের পিছনে হাত ধুয়ে এভাবে সিবিআই- ইডি’র লেগে পড়াটা যে অনেকাংশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেটা পাঁচ পাবলিক এখন ধরে ফেলছে।

ইডি-সিবিআইয়ের সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের তালিকায় রয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাঁকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার তলব দিয়ে দিয়েছে ইডি। যদিও তিনি তাতে সাড়া দেননি। কিন্তু কেজরিওয়াল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, যে কোনও মুহূর্তে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। ইডি ডাকাডাকি শুরু করেছে বিহারে আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ পুত্র তেজস্বী যাদবকে। এ রাজ্যেও তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বেশ কয়েকবার ডেকেছে ইডি। এ রাজ্যের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিয়মিত বলে চলেছেন, এরপর কাকে কাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

শুনলে ভ্রম হতে পারে, এঁরা দুজনেই বোধকরি ইডি’র মুখপাত্র। মহারাষ্ট্রেও উদ্ধব ঠাকরের ঘনিষ্ঠ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই যেসব নেতাদের পিছনে ইডি, সিবিআই হাত ধুয়ে লেগেছে তাঁরা সবাই যে ধোয়া তুলসীপাতা সে কথা কেউ বলবে না। বরং এঁদের অনেকেই অনেক রকম বড়সড়ো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। প্রশ্নটা, এঁদের পিছনে ইডি-সিবিআইয়ের লেগে পড়া নিয়ে নয়। প্রশ্নটা হচ্ছে শুধু বেছে বেছে এই বিরোধীদের পিছনে লাগা কেন? বিরোধী নেতাদের অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তা নিয়ে যেমন সংশয় নেই, তেমনই বিজেপির মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবাই ধোয়া তুলসীপাতা – এই রকম একটি তত্ত্ব বিশ্বাস করতেও কিন্তু কষ্ট হয়।

যদি বিজেপির দিকে তাকাই তাহলে দেখব, এই দলে আশ্রয় নিয়েছেন এমন অনেক নেতা, যাঁদের বিরুদ্ধে একদা দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছিল বিজেপিই। এঁদের ভিতর কেউ কেউ দল পালটে বিজেপিতে যোগ দিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন। কেউ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, কেউ উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, কেউ বিরোধী দলনেতা হয়েছেন, কেউ বা কোনও সরকারি সংস্থার মাথায় বসেছেন। যাঁর যেমন বাজারদর আর কী।

শোনা যায়, এঁদের সবাইকেই ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে বস্তাবন্দি করা হয়েছে এবং আশ্চর্যের বিষয়, সিবিআইয়ের খাতায় এঁদের নাম থাকলেও দল পালটানোর পর সিবিআই, ইডি একদিনও এঁদের বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েনি। এছাড়া বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ব্যাপম দুর্নীতি ব্য শোরগোল ফেলেছিল। তা নিয়ে কোনও ইডি-সিবিআই তদন্ত কস্মিনকালেও হয়নি। কর্ণাটকে পূর্বতন বিজেপি সরকারটির নামই হয়ে গিয়েছিল কমিশনের সরকার। সে নিয়ে বিজেপি নেতারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বিজেপির পোস্টারবয় যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে অজস্র ভুয়ো জব কার্ডের অভিযোগ উঠেছে। এই ভুয়ো জব কার্ডের পরিমাণ পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক বেশি। তা নিয়ে সিবিআই তদন্তের কথা কেন্দ্র সরকার কখনও বলে না।

ধন্দটা ঠিক এখানেই। বিজেপি কি সত্যিই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে আগ্রহী? নাকি, আসলে বিজেপির কাছে সবটাই রাজনীতি? দুর্নীতি নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথাই নেই।

দল ভাঙিয়ে এবং দলবদলুদের নিয়ে সরকার গড়াকে বিজেপি এক শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। মহারাষ্ট্রে এ কাজ তারা করেছে। অতীতে মধ্যপ্রদেশ এবং কর্ণাটকেও করেছিল। অতি সম্প্রতি বিহারে নীতীশ কুমারকে ভাঙিয়ে এনেও একই কাজ করল। এরই পাশাপাশি ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের পর আর একটি নতুন রাজনৈতিক খেলা শুরু করেছে বিজেপি। তা হল, যেসব রাজ্যগুলিতে বিজেপির ফল খারাপ হয়েছিল সেইসব রাজ্যগুলিতে ইডি-সিবিআইয়ের অভিযান চালিয়ে বিরোধী নেতাদের ব্যতিব্যস্ত রাখা, দরকার হলে তাঁদের কাউকে কাউকে দল বদলে বাধ্য করা। সেই সঙ্গে জনমানসে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি করা যে, বিরোধী নেতা মাত্রই অসৎ। সে খেলাটিতে বিজেপি সাফল্যও অর্জন করেছে। জনমানসে বিরোধী নেতাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক বিরোধী নেতা সুড়সুড় করে বিজেপির শিবিরে এসে ঢুকেছেন। ঢুকছেনও। আর অন্তরালে চলে যাচ্ছে সেইসব ইস্যু যা বিজেপিকে ভোটের সময় কাঠগড়ায় তুলতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনটি কীভাবে লড়তে চাইছে বিজেপি। সাদা চোখে যা বোঝা যাচ্ছে, বিজেপি আসলে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাইছে। একতরফা একটি নির্বাচন লড়তে চাইছে। যে নির্বাচনে বিরোধীদের কোনও অস্তিত্বই প্রায় থাকবে না। আর সে কাজটি করা সম্ভব হবে যদি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দেওয়া যায়?

কিন্তু কেন? রাম মন্দির নিয়ে হিন্দুত্বের ধুয়ো তুলে বা সবকা বিকাশের কথা বলেও কি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না বিজেপি নেতারা? তাঁদের কি কোথাও ভয় আছে যে, অনেক ক্ষেত্রে উলটা বুঝলি রামও হতে পারে। এর একমাত্র উত্তর শুধু বিজেপি নেতারাই দিতে পারবেন। আমরা পাঁচ পাবলিক শুধু এইটুকু জানি, ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার ভিতরে কোনও কৃতিত্ব নেই।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.
RELATED ARTICLES
- Advertisment -
- Advertisment -spot_img

LATEST POSTS

ISL | মধুর প্রতিশোধ যুবভারতীতে, ২-০ গোলে ওডিশাকে হারিয়ে আইএসএল ফাইনালে মোহনবাগান

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ওডিশাকে ২-০ গোলে হারিয়ে আইএসএলের ফাইনালে পৌঁছে গেল মোহনবাগান। ইনজুরি টাইমে জয়সূচক গোলটি করেন আব্দুল সাহাল। মোহনবাগানের...

AAP | আপের হয়ে দিল্লিতে প্রচারে অরবিন্দ পত্নী, ভিড় জমালেন মহিলারা

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: ‘যার স্বামী জেলে আছে, তাঁকে তো বাইরে আসতেই হবে’ কথাগুলি ৫২ বছরের কমলেশ জৈনের। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালের স্ত্রী সুনীতা...

Titanic | নিলাম হল টাইটানিকের ধনকুবের যাত্রীর সোনার পকেটঘড়ির, দাম উঠল  ১০ কোটি

0
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ডুবে গেলেও আজও জীবিত আছে মানুষের স্মৃতির মণিকোঠায়। ১১০ বছরেরও বেশি জলের তলায় রয়েছে বিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক। টাইটানিককে নিয়ে রয়েছে...

Siliguri | মাটিগাড়ায় হামলা, আক্রান্ত বিজেপির বুথ সভাপতি সহ ৬

0
শিলিগুড়ি: মাটিগাড়ার কলাইবক্তরি এলাকায় রবিবার সন্ধ্যায় একদল দুষ্কৃতী বিজেপির স্থানীয় বুথ সভাপতি নন্দকিশোর ঠাকুর সহ কয়েকজন বিজেপি কর্মকর্তার বাড়িতে হামলা চালায়। যার জেরে দু’জন...

Migrant Worker | রমরমিয়ে চলা মাছের ব্যবসাই হল কাল, কেরালায় খুন হলেন মানিকচকের পরিযায়ী...

0
মানিকচকঃ কেরালায় গিয়ে মাছের ব্যবসায় ব্যাপক পসার জমিয়েছিলেন মালদার মানিকচক নাজিরপুরের একটি ছোট্ট গ্রাম লস্করপুরের যুবক প্রকাশ। স্বল্প লাভে মাছ বিক্রি করায় অল্প দিনের...

Most Popular