- আশিস ঘোষ
না, কেউ জয়ী হয়নি। এমনকি, ফার্স্টের সঙ্গে তফাতও তাদের বিস্তর। দেখা যাচ্ছে, ভোটারদের কেউই তাদের বলবান পালোয়ান বলে মনেও করেনি। লড়াই সেকেন্ড পজিশনের। তা নিয়েই বাগযুদ্ধ। এক দল ভোট পেয়েছে মোট ভোটের ১২.৪০ শতাংশ। আরেক দল ৮.৮৭ শতাংশ। এক দল কম প্রার্থী দিয়ে বেশি ভোট পেয়েছে, অন্য দল বেশি প্রার্থী দিয়ে কম ভোট।
অসমের ডিমা হাসাওয়ের পাহাড়ি অঞ্চলে উত্তর কাছাড়ের পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের ভোটের হিসেব। এবারের ভোটে সেখানকার ২৮টির মধ্যে ২৭টিতেই জিতেছে বিজেপি। একটি সিটে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। ভোট পড়েছিল পঁচাশি শতাংশেরও বেশি। লড়াইয়ে দুই দল ছিল বটে, তা না থাকারই মতো। কেউ তাদের নিয়ে বিশেষ মাথাও ঘামায়নি।
কথা হল, সেই কয়েকশো মাইল দূরের একটা পার্বত্য পরিষদের ভোট এবং তার রেজাল্ট নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতে যাব কেন? এই ভোটে সে রাজ্যে গদি ওলটাবে না। অদূরভবিষ্যতে তেমন সম্ভাবনাও নেই। তবে তা নিয়ে মাথাব্যথার কারণ কী থাকতে পারে? কারণ থাকতও না যদি না ইন্ডিয়া নামে একটা জোট হত আর তাতে কংগ্রেস এবং তৃণমূল শামিল না হত। সবসময়ই যা নিয়ে যে কোনও জোটে জট পাকায়, সেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে দুই দলের দড়ি টানাটানির সূত্রেই এসে পড়েছে কাছাড়ের ভোটের হিসেব।
এই ভোটে কংগ্রেস তৃণমূলের থেকে বেশি আসনে প্রার্থী দিয়ে কম ভোট পেয়েছে। আর প্রথমবার দাঁড়িয়ে তাদের থেকে চার শতাংশের বেশি ভোট টেনেছে তৃণমূল। অতএব তাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক টুইটে শ্লাঘা প্রকাশ করেছেন এ রাজ্যে কংগ্রেসের বেশি আসন দাবি করা নিয়ে। রীতিমতো সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে তিনি বলেছেন, এ রাজ্যে কংগ্রেসের বেশি আসনের দাবি অনেকটা আকাশের চাঁদ ছোঁয়ার মতো। অসমে কংগ্রেস প্রধান বিরোধী দল। তাদের নিজের উঠোনেই পায়ের তলায় মাটি নেই।
এখন এহেন তর্জায় কাছাড়কে টেনে আনা খানিকটা চমকপ্রদ হলেও, শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের কাছে অসমে সিট চাইবে তৃণমূল। যেমন কংগ্রেস তাদের জেতা দুটো আসন ছাড়াও বাড়তি আসন চাইছে এ রাজ্যে। সেই বাড়তি আসনের সংখ্যা কত তা নিয়ে এখনও মনস্থির করে উঠতে পারেনি সোনিয়ার দল, শোনা যাচ্ছে তেমনই। তা ছয় থেকে দশ যা কিছু হতে পারে। এই অবস্থায় কত ছাড়বে তৃণমূল তাও ঠাহর করা কঠিন। তবে তা দুইয়ের বেশি করতে গেলে ভিনরাজ্যে তৃণমূলকে আসন ছাড়তে হবে কংগ্রেসকে। দরকষাকষির এটাই গোড়ার সূত্র।
তারপর আসছে পশ্চিমবঙ্গে কত সিট নিজের জোরে দাবি করতে পারে সেই হিসেব। বহরমপুর আর মালদা দক্ষিণ ছাড়া আর কোন আসনে তারা দাবিদার? একদা জেতা রায়গঞ্জ কিংবা মালদা উত্তরে এখন কংগ্রেসের কী হাল? বামেদের সঙ্গে জোট বেঁধেও তারা বিজেপির থেকে পিছনে। অনেকটাই পিছনে। এই অবস্থায় একার জোরে রাজ্যের ৪২টা সিটের মধ্যে ক’টায় জিততে পারে কংগ্রেস। এমনকি, দ্বিতীয়ই বা হতে পারে ক’টায়? প্রশ্নটা সহজ আর উত্তরও তো জানা।
আসলে একের বিরুদ্ধে একের তত্ত্বে গোড়া থেকেই সওয়াল করে আসছেন তৃণমূল নেত্রী। এখানে সেই পথে বাধা দুস্তর। কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে আদৌ হাত মেলাবে কি না তা নিয়ে দলেই প্রচুর দ্বিধা। কারও মতে, তৃণমূলের সঙ্গে গেলে বাংলায় দলের ঘটিবাটি চাঁটি হয়ে যাবে। খোদ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি যে ভাষায় তৃণমূলের বাপবাপান্ত করছেন তাতে ঐক্যের জল কতদূর গড়াবে তা প্রশ্নের মুখে। এখন বাস্তব অবস্থা বিচার করে অন্যত্র সিট ছেড়ে এখানে কতটা ছাড়া যেতে পারে তা ভেবে দেখতে হবে কংগ্রেসের হাইকমান্ডকে। অবশ্য শেষমেশ কী যে হবে কে জানে? প্রায় গোটা দলকে সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রার বেরিয়ে পড়েছেন রাহুল। বিজেপির রাম মন্দিরের মোকাবিলায় দলকে চাঙ্গা করতে আপাতত এটাই কংগ্রেসের কর্মসূচি। মহারাষ্ট্রে খানদানি কংগ্রেস নেতা মিলিন্দ দেওরা দল ছেড়েছেন এই সিট ভাগাভাগি নিয়েই। জোটের সবাই ঠিক একসুরে বাজছে না যে তাও দিনে দিনে পরিষ্কার হচ্ছে। এখানে কী হবে কে জানে!